চট্টগ্রাম: ‘করোনাকালীন শিক্ষা খাতে প্রাইভেট সেক্টরে কোন প্রণোদনা দেয়া হয়নি। বহু বেসরকারি স্কুল আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, বেতন না পেয়ে বহু শিক্ষক পেশা পরিবর্তন করেছে। করোনাকালীন দেশের ৯১ শতাংশ শিশু ও তরুণ মানসিক চাপে রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে মানসিক রোগে ভুগছে। শিক্ষা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডে-শীফটে ফিজিক্যাল ক্লাশ ও সন্ধ্যাকালীন অনলাইন ক্লাশ চালু করা যায়।’
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) সকালে ঘাসফুল আয়োজিত ‘কোভিড ১৯: শিক্ষা ক্ষতি-পুনরুদ্ধার ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঘাসফুলের চেয়ারম্যান মনজুর-উল-আমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঘাসফুলের সিইও আফতাবুর রহমান জাফরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘করোনাকালীন ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধারে নাগরিক সমাজ ও শিক্ষক সমাজ নিয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। পুনরুদ্ধার ও এগিয়ে চলার প্রক্রিয়াটি মানবকেন্দ্রিক ও জনবান্ধব হতে হবে। করোনাকালীন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে আরো গবেষণা প্রয়োজন। ক্ষয়ক্ষতির ব্যবধান রয়েছে, যেমন ধনী-দরিদ্র, শহর-গ্রাম, আবার গ্রামাঞ্চলের হাওড়-বাওড়, পাহাড়, চর, দ্বীপ, উপকুলীয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাতে আবার জীবিকা হারিয়ে অনেকেই গ্রামে চলে যান। এ ক্ষেত্রে পুনরুদ্ধার কাজে গ্রামে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে অন্যদের পাঠদানের মাধ্যমে বেস্ট প্র্যাকটিস প্রচলন করতে হবে। শিক্ষা খাতে বাজেটের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাখাতের ক্ষয়ক্ষতির পুনরুদ্ধার ভাবনাকে এসডিজি-চার এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হিসেবে তৈরি করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অনতিবিলম্বে করোনাকালীন শিক্ষা ক্ষতির একটি পুর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা জরুরী। করোনাকালীন প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে; তার প্রতি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন উদ্যোগে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক উদ্যোগের পরিসর বাড়াতে হবে।’
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমএ সাত্তার মন্ডল, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এএফ ইমাম আলি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি গোলাম রহমান, ইউসেপ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেণু কুমার দে, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন।
বক্তারা বলেন, ‘করোনাকালীন যে অনলাইন পাঠদান শিক্ষা সংস্কৃতি, দক্ষতা তৈরি হয়েছে; তা ধরে রাখতে হবে, কোনভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে ডিজিটাল অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে গ্রামেগঞ্জের শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঢাকার সিনিয়র অপারেশন অফিসার ফর এডুকেশান মোখলেসুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাক্তার হাসান শাহরিয়ার কবির, ডাক্তার খাস্তগীর সরকারী বালিকা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার, লাখেরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুসুম চৌধুরী, ঘাসফুল পরাণ রহমান স্কুলের অধ্যক্ষ মাহমুদা আক্তার, রাংগুনিয়াস্থ পশ্চিম শিলক বেদৌরা আলম চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবিনা ইয়াসমিন, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম, এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তহুরিন সবুর ডালিয়া, এমজেএফের সমন্বয়কারী (চাইল্ড প্রটেকশন) রাফিজা শাহীন, ব্র্যাকের চিফ অব পার্টি মাহমুদ হাসান, গণস্বাক্ষরতার ডেপুটি ডিরেক্টর তপন কুমার দাশ, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) শিক্ষার্থী মো. মনজুর হোসেন, চবির শিক্ষার্থী রাশেদা আক্তার, সাবিহা বিনতে জসিম।
ওয়েবিনারে সংযুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিনিধি ঋষিকেশ বাবু, আশ্রয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (এসডিপি) কেএম জি রব্বানী বসুনিয়া, নোয়াজিশপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুল, ফুলকির অধ্যক্ষ শিলা মোমেন, নওগাস্থঁ নিয়ামতপুর সরকারী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর কবির, ব্লুম চিটাগাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা তাসনিম আবেদীন, হাটহাজারী ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া বহুমূখী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, ঘাসফুলের নির্বাহী সদস্য পারভীন মাহমুদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কবিতা বড়ুয়া, ইপসার প্রতিনিধি অপুর্ব দেব, কোডেকের প্রতিনিধি ওয়াসিফ আলম, সংশপ্তকের প্রধান নির্বাহী লিটন চৌধুরী, স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলী শিকদার, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া, সাংবাদিক এ্যানি বিশ্বাস পূজা।
সিএন/এমএ
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন