সাইয়িদ মাহমুদ তসলিম :
ওয়েষ্টটিনের ঈগল পাখিটা আর ফিরে আসেনি । পোষা প্রাণীটি হারিয়ে গেছে অজানায় । হারিয়ে যাওয়া পাখিটির শোকে নিয়ম হয়ে গেছে অনিয়ম। দ্বিতীয় পোষা বিড়াল এখন তার একমাত্র সম্বল । বিড়াল ও ঈগলকে নিয়ে ওয়েস্ট্রিন যে ঘরবন্ধি সময় কাটতো তা এখন রীতিমত শোক । ঈগল না আসার শোক কোনভাবেই মানতে পারছেনা ওয়েষ্টটিন।
ওয়েস্টটিনের জন্ম বাফেলো শহরে। জন্মগত সূত্রে সে আমেরিকান সিটিজেন । তবে তার মা- বাবা মেক্সিকান । তারাও কিছুদিন পর নাগরিকত্ব লাভ করবে হয়তো । গেল বছর নভেম্বরে ওয়েস্টটিনরা স্বপরিবারে মেক্সিকো বেড়াতে গেলেন । সাথে পোষা বিড়ালটাও নিয়ে গেলেন। সেখান এক মাস অবস্থান করেন । ওয়েষ্টটিনের ঠাকুরদা ঈগল প্রিয় মানুষ ছিলেন । তিনি ঈগল লালন পালন করতেন । বাসার মধ্যে তিনটা বাচ্ছা সহ মা পাখিটা ছিল । এক মাস ওয়েষ্টটিন ঠাকুর দাদার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে বিড়াল ও ঈগল নিয়ে মহানন্দে ছিলেন । আসার সময় তার ঠাকুরদা একটা ঈগল ছানা উপহার দেয়। বিড়ালের সাথে ঈগল ছানা পেয়ে ওয়েষ্টটিন মহাখুশী।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তারা বাফেলো শহরে চলে আসে । আসার পর পরই শুরু হয় করোনা। ওয়েষ্টটিনের স্কুলও বন্ধ হয়ে যায় । তবে বাসায় অন লাইন স্কুল চলে। ওয়েষ্টটিন ঈগল, বিড়াল ও অনলাইন স্কুল নিয়ে ঘর বন্ধি জীবন যাপন করছে ।
ওয়েষ্টটিনরা থাকে ওয়েস্ট সাইডে রিভার ক্যানেলের পাশে । তাদের বাসার পিছনের ব্লকে বিশাল একটি গির্জা রয়েছে । গির্জাটির বয়স প্রায় পৌন দুশ বছর । গির্জার সামনে মাঠ ও পিছনে ঝোপঝাড় । ঘেরা জঙ্গল। দেখতে সুন্দর । ছোট খাট জঙ্গল হলেও গির্জার দর্শনার্থীরা পিছনের ফুল পাখি জঙ্গলে বসে প্রকৃতির সাথে আত্মার মিলন ঘটান নিরবে নিভৃতে ।
ওয়েষ্টটিনের পোষ মানা ঈগলটা এত সময়ে ডানা মেলে উড়তে শিখেছে । ঈগলের দৌড় বড়জোর ওই গির্জার মাঠ প্রান্ত । ঈগল ঘুরে ফিরে যথাসময়ে ওয়েষ্টটিনের বাসায় ফিরে আসে ।
ওয়েষ্টটিন বিড়াল ও ঈগলের জন্য ইনস্যুরেন্স করে রেখেছে । যাতে অসুখ হলে তাদের চিকিৎসা করতে পারে। প্রতিসপ্তাহ বিড়াল ও ঈগলের জন্য ফুড মার্কেট থেকে চিকেন , হার্ট ডগ এবং অন্যান্য সুস্বাধু খাবার কিনে আনে ।
গত সপ্তাহে এ শহরে মধ্যরাতে শুরু হয় , ঝডো হাওয়া কালবৈশাখী । ঐ দিন ঈগলটা ছিল বাড়ীর পোস্টে লোহার পিন্জিরায় । কাল বৈশাখী ঝড় হাওয়ায় পিন্জিরার দরজা কপাট খুলে যায় । দরজা খোলা পেয়ে ঈগল অগান্তুক অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ে। তারপর কোথায় উড়ে চলে যায় ।
সকালে ঘুম থেকে ওয়েষ্টটিন ও তার মা দেখে কাল বৈশাখে সব লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে । ঈগল পাখিটাও নেই । পাখির খাঁচা পড়ে আছে পোস্টের বাহিরে । ঈগলকে না পেয়ে ওয়েষ্টটিনের অঝোর কান্না । পরে সহায়তা ইমারজেন্সী বিভাগ ১১১ এ কল করে । পশু পাখি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পুলিশ আসে । ওয়েষ্টটিনের অভিযোগে লেখা হয় , তার ঈগল খয়েরি রঙের । ঈগলটির মাথা ধবধবে সাদা, সেইসঙ্গে শক্তিশালী উজ্জ্বল হলুদ ঠোঁট আর পা। তার খিদে ফেলে সে মায়াবী দৃষ্টিতে ওয়েষ্টটিনের দিকে থাকিয়ে থাকে ।
পুলিশ ওয়েষ্টটিনের কান্নায় দু:খ প্রকাশ করে এবং জানতে চাই , এত পাখি থাকতে সে কেন ঈগলের প্রতি দুর্বল । প্রতি উত্তরে ওয়েষ্টটিন জানায় , ওটা আমার ঠাকুরদা দিয়েছে । ঈগল আমেরিকার জাতীয় পাখি। তাঁরা মানুষেরেই চাহিদা বোঝেন। কারণ আমেরিকার যে-কোনো সরকারি প্রতীকে ঈগলকে দেখা যায় । ঈগলের সাথে সৃস্মিময় দিন গুলো নিয়ে ভাবে আর কাঁদে ওয়েষ্টটিন। ওয়েষ্টটিনের বিশ্বাস ঈগল একদিন তার কাছে ফিরে আসবে। এ প্রতিক্ষায় প্রায়শই গির্জার পেছনে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থাকে আর কল্পনা করতে থাকে ঈগল ফিরে আসবে। হয়ত সে আসলেই একদিন ফিরে আসবে!
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন