চলমান ডেস্ক: হিজরি সনের ১১তম মাস জিলকদ। এ মাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা রমজান পরবর্তী ঈদের মাস শাওয়াল ও হজের মাস জিলহজের আগের মাস হওয়ায় জিলকদ মাসটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। ইসলামে হারাম বা নিষিদ্ধ যে চার মাস রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল এ জিলকদ মাস।
হারাম চার মাস হল মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। হারাম চার মাসের মধ্যে যে তিনটি মাস এক সাথে, তার সূচনা মাস হল জিলকদ মাস। ঈদুল ফিতর (শাওয়াল মাস) ও ঈদুল আজহার (জিলহজ মাস) মাঝামাঝিতে জিলকদ মাসের অবস্থান হওয়ায় এ মাসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
জিলকদ শব্দের অর্থ স্থির হওয়া বা বিশ্রাম নেয়া। জিলকদ মাসকে বিশ্রামের মাস বলা হয়। কেননা এ মাসের আগের চার মাস ও পরের দুই মাস ইবাদতে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ কারণে জিলকদ মাসে মুসল্লিরা বিশ্রামের সুযোগ পায়। জিলকদের মাসেরও বেশ কিছু আমল রয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন কারণে এ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে যে কয়টি ওমরা করেছেন, তার সব কয়টি করেছেন এ জিলকদ মাসে। এ মাসেই সংঘঠিত হয়েছিল হুদায়বিয়ার সন্ধি ও বাইয়াতে রিদওয়ান।
জিলকদ মাসটির প্রকৃত নাম হল- জুল-আল-কাআদাহ। আর এর অর্থ হল বসা বা স্থিত হওয়া ও বিশ্রাম নেয়া। রজব থেকে শাওয়াল মাস পর্যন্ত চারটি মাস মুমিন মুসলমান ধারাবাহিক ইবাদতে ব্যস্ত সময় পার করে। এ চার মাসের ব্যাখ্যা এসেছে এভাবে- রজব হল আল্লাহর মাস, বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাস;
শাবান হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাস, ইবাদতের বীজ বপনের মাস; নিসফ শাবান বা শবে বরাত ও সর্বাধিক নফল রোজা ও নফল ইবাদতের মাস; রমজান হল উম্মতের মাস, ফসল তোলার মাস, ফরজ রোজা, তারাবির নামাজ, কিয়ামুল্লাইল; কোরআন নাজিলের মাস ও ইবাদত-তেলাওয়াতে মশগুল থাকার মাস; শাওয়াল হল ঈদুল ফিতর, সদকাতুল ফিতর ও নির্ধারিত সুন্নাত গুরুত্বপূর্ণ ছয় রোজার মাস এবং জিলকদ মাস হল বিশ্রাম গ্রহণের মাস। কেননা এ মাসে নির্দিষ্ট কোন ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নত কোন আমল নেই বিধায় এ মাসে মুমিন মুসলমান বিশ্রাম নেয়। আর এ মাসে যাতে মুমিন কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ তথা বাদানুবাদ থেকে বিরত থাকতে পারে, তাইতো এ মাসে সব ধরনের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ নিষিদ্ধ।
এ মাসে আরবের লোকজন বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসত। তাই এ মাস বিশ্রামের মাস। ঋতুর পরিবর্তনে এ সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোন কাজ থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী, তারা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত ও অন্যায়-অপরাধ (মদ্যপান) থেকেও নিবৃত্ত থাকত। এসব কারণেও এ মাসের নাম জিলকদ। (লিসানুল আরব, ইবনে মানজুর)।
ইবাদতের শক্তি অর্জনের মাস জিলকদ: রজব ও শাবান মাসে নফল রোজা পালন, রমজান মাসজুড়ে রোজা ও রাতে তারাবি আদায় শাওয়ালে ছয় রোজা রাখার পর জিলহজ মাসে ফের ইবাদতের প্রস্তুতিতে নিজেকে প্রাণবন্ত করার মাস হল জিলকদ। এ মাসের শক্তি সঞ্চার করে জিলহজ মাসের প্রথম নয়টি রোজা ও মহররমের দশটি নফল রোজা ও ইবাদতে অতিবাহিত করবে মুমিন।
জিলকদ মাসের আমল: জিলকদ মাসের বিশ্রামের পাশাপাশি কিছু আমল করা যেতে পারে আর তা হল- এ মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ রোজা রোখা; ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামের বিজের রোজা রাখা; সোম ও বৃহস্পতিবারের সাপ্তাহিক সুন্নাত রোজা রাখা; বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায় করা; সম্ভব হলে ওমরা পালন করা; হজের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং কোরবানির প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
ইসলামে ইতিহাসে জিলকদ মাসের স্মরণীয় ঘটনা ও ফজিলত: এটি যে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধের মাস; ১ জিলকদ হুদায়বিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়; এ মাসেই বাইয়াতে রেদওয়ান অনুষ্ঠিত হয়েছিল; ৮ জিলকদ মুসলমানদের জন্য জীবনে এক বার হজ পালনকে ফরজ করা হয়েছে; ২৫ জিলকদ হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম; ২৫ জিলকদ পবিত্র কাবা শরিফ পৃথিবীতে প্রথম ভিত্তি স্থাপিত হয় বলে জানা যায়; সপ্তম হিজরির জিলকদ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ওমরা পালন করেছিলেন; এ মাসেই মহানবী তার জীবনের সব ওমরাহ পালন করেন।
অতএব, সব মুসলিম উম্মাহকে এ জিলকদ মাসটিও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অতিবাহিত করা উচিত। রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জিলকদ মাসে ইবাদতের শক্তি অর্জনের তাওফিক ও করোনাসহ বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে মুক্তি দান করুন।
সিএন/এমএ
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন