ইফতেখার ইসলাম: অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ বাংলাদেশ। এদেশের নদী,পাহাড় সব সময় সৌন্দর্য ছড়ায়। আর ঋতুতে ঋতুতে এই সৌন্দর্যে আসে বিভিন্নতা। আর এই দেশের সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানগুলোর প্রতি আকর্ষণেরও কমতি নেই দেশি বিদেশি দর্শনার্থীদের।
বর্ষা হলেই এ দেশের নদী ও হাওড়ে বাড়ে পানি। আর এই সময় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ কে না করতে চায়। বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে দেশে মোট ৪১৪টি হাওর আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবানুসারে হাওরের সংখ্যা ৪২৩টি। চলুন জানি এদের মধ্যে বর্ষায় দর্শনীয় সেরা ৩ হাওর সস্পর্ক—
টাঙ্গুয়ার হাওর:
বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয়দের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত।এটি দেশের দ্বিতীয় রামসার স্থান হিসেবে পরিচিত, আর প্রথমটি হলো সুন্দরবন।
ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। বর্ষায় এর পুরোটাই পানিতে ডুবে থাকলেও শীতে পানি কমতে থাকে। এর বড় একটা অংশ তখন শুকিয়ে যায় যায়।
টাংগুয়ার হাওর এর প্রধান দুটি পাখির অভয়ারণ্য হল লেউচ্ছামারা ও বেরবেড়িয়ার বিল। এ হাওর শুধু একটি জলমহাল বা মাছ প্রতিপালন, সংরক্ষণ ও আহরণেরই স্থান নয়। এটি একটি মাদার ফিশারী। হিজল করচের দৃষ্টি নন্দন সারি এ হাওরকে করেছে মোহনীয়।
হাকালুকি হাওর:
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর। এটি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। তার মধ্যে শুধু বিলের আয়তন ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা (৪০ শতাংশ), কুলাউড়া (৩০ শতাংশ), সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ (১৫ শতাংশ), গোলাপগঞ্জ (১০ শতাংশ) বিয়ানীবাজার (৫ শতাংশ) জুড়ে বিস্তৃত।
ভূ-তাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় ও পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতিবছরই আকষ্মিক বন্যা হয়। এই হাওরে ৮০-৯০টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল আছে। শীতকালে এসব বিলকে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
বর্ষাকালে হাওর এলাকায় পলিমাটি পড়ায় বিলগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর সেখানে কিছু কিছু জায়গায় ধান চাষ করা হয়। ফসল কাটার পর বিলগুলিতে হাজার হাজার গবাদি পশু বিচরণ করে। হাকালুকি হাওরে প্রচুর পরিমাণ মৎস্য সম্পদ রয়েছে।
এই হাওরের বিলগুলো অনেক প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রাকৃতিক আবাস। মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে, এই হাওর হলো মাদার ফিশারী। এখানে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির মাছ আছে। হাওর এলাকায় প্রধানত পেশাদার জেলে, মৌসুমি জেলে ও খোরাকি জেলেদের বসবাস আছে।
নিকলী হাওর:
বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। এর নাম এসেছে নিকলী উপজেলা থেকে, যেখান থেকে হাওরটির উৎপত্তি হয়েছে। নিকলী ছাড়াও এই হাওরের পরিধি পার্শ্ববর্তী মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। ঢাকা থেকে এর দুরত্ব ১১০ কিলোমিটার।
এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি ও জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। ঢাকার সাথে সহজ সড়ক ও রেল যোগাযোগ এই হাওরের পর্যটন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। নিকলীতে একাধিক আবাসিক হোটেল গড়ে উঠায় পর্যটকরা এখন একাধিক দিন হাওর ভ্রমণের সুবিধা পাচ্ছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসই হলো নিকল হাওর ভ্রমণের সেরা সময়।
আইআই/সিএন
Views: 1
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন