চবি প্রতিনিধি: চারটি দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। চিঠিতে দাবি আদায়ে তিনদিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সোমবার (২০ মার্চ) চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকি ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক সই করা তিন পৃষ্ঠার চিঠিটি উপাচার্যের নিকট পাঠানো হয়।
চার দফা দাবি হলো- চবি প্রশাসন কর্তৃক সিন্ডিকেটে অবশিষ্ট ক্যাটাগরির (ডিন, প্রভোস্ট, একাডেমিক কাউন্সিল ইত্যাদি) শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা; নিযোগ বাণিজ্য সংক্রান্ত অডিও কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার কার্যকর প্রচেষ্টা গ্রহণ; বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত কিংবা বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশবিহীন বিজ্ঞপ্তি প্রদান ও বাতিলকৃত আবেদনকারীদের নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের সুরাহা; এবং দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমিতির দাবিকে উপেক্ষা করে পরিচালিত বিভিন্ন অনিয়ম অসংগতির ব্যাপারে সন্তোষজনক ও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ।
চিঠিতে লেখা হয়, উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এবং সহ-উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক বেনু কুমার দে দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন না করার পাশাপাশি যথাসময়ে বেশ কিছু শিক্ষকের পদোন্নতির নির্বাচনী বোর্ড সভা আহ্বান না করে তাঁদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী বিভিন্ন অনিয়ম অসংগতির ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যম সমূহে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে শিক্ষকগণের মধ্যে বর্তমান প্রশাসনের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কিত খবর প্রকাশের ধারাবাহিকতায় নিয়োগ বাণিজ্য বিষয়ক কয়েকটি অডিও কেলেঙ্কারি প্রকাশের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক সমাজ চরম ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে। উক্ত অডিও কেলেঙ্কারি ও তৎসংক্রান্ত সংবাদের মাধ্যমে অন্যদের সাথে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীসহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন কর্মচারির তথাকথিত নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয় স্পষ্ট হলে তাঁদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে নেপথ্যের নায়কদের চিহ্নিত করার জন্য চবি সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তের পাশাপাশি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানানো সত্ত্বেও বর্তমান প্রশাসন এ ব্যাপারে অদ্যাবধি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় নিয়োগ কেলেঙ্কারির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ সম্বলিত অসংখ্য সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রকাশ হতে থাকে। এর ফলে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়, এতে অধ্যনরত বর্তমান ও প্রাক্তন হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং কর্মরত সহস্রাধিক শিক্ষকের মান-মর্যাদা চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়। ফলশ্রুতি হিসেবে প্রশাসন কর্তৃক সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনীহা, এই নির্বাচন ও আইনের শাসনের দাবিতে উচ্চকণ্ঠ শিক্ষকগণের সাথে চরম অবদমনমূলক আচরণ, বিভিন্ন অনিয়ম-অসংগতি ও দুর্নীতির ব্যাপারে অব্যাহতভাবে সংবাদ প্রকাশ এবং অডিও কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় এনে তথাকথিত নিয়োগ বাণিজ্য চক্রের হোতাদের চিহ্নিত করতে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবের মধ্যে স্পষ্ট একটি যোগসূত্র রচিত হয় যা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে প্রশাসনিক বিভিন্ন অনিয়ম অসংগতির বিরুদ্ধে শিক্ষকগণের কঠোর অবস্থান ও আন্দোলন কর্মসূচির বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রশাসনকে সুরক্ষা প্রদানকারী প্রভাবশালী অসংখ্য শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে গণ পদত্যাগ ও পরস্পরের বিরুদ্ধে আনীত অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ সমূহ দ্বারা অধিকতর সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে।
চিঠিতে আরও লেখা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন দাবি কিংবা শিক্ষকগণকে সাথে নিয়ে পালিত আন্দোলন কর্মসূচি সমূহ বিন্দুমাত্র আমলে না নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ কে সম্পূর্ণরূপে অবজ্ঞা করে অব্যাহতভাবে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ ছাড়া বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত নিযোগ এবং তথ্য জালিয়াতির মত অভিযোগে আবেদনপত্র বাতিলকৃত প্রার্থীকে আইন বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পরীক্ষায় আমন্ত্রণ জানানোর মতো অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অতি সম্প্রতি পলি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভায় সদস্য হিসেবে বিভাগীয় সভাপতি কর্তৃক দ্বিমত পোষণ সত্ত্বেও উপাচার্যের উপস্থিতিতে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সভায় তথ্য গোপনের পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা চেষ্টার অভিযোগে আবেদনপত্র বাতিলকৃত অত্যন্ত কম মেধাসম্পন্ন একজন প্রার্থীকে (যিনি চবিতে দায়িত্বরত একজন সহকারি প্রক্টরের স্ত্রী এবং ২০ বছর পূর্বে এম.এ. অধ্যয়ন সম্পন্ন করেছেন) বেআইনিভাবে নিয়োগ পরীক্ষায় আমন্ত্রণ জানানো এবং শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ সুপারিশের বিষয় সংবাদপত্র সমূহে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হওয়ার ঘটনা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক
সমাজকে চরম লজ্জার মধ্যে নিপতিত করেছে।
চিঠিতে আরও লেখা হয়, উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য দুজনই তাঁদের চাকুরী জীবন থেকে অবসরে যাওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক সমাজ এবং দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভাবমূর্তির প্রতি নূন্যতম আগ্রহ বা দায়িত্ববোধ না থাকতে পারে, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সরকারের দীর্ঘ সময় ধরে চলমান ঈষণীয় উন্নয়ন অভিযাত্রা ও সাফল্যকে স্নান করে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে। এমতাবস্থায় কোন অবস্থাতেই দেশের অন্যতম সেরা এই বিদ্যাপীঠে বিরাজমান এ সকল প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অসংগতি আর চলতে দেয়া যায় না বিধায় জরুরি ভিত্তিতে নিম্মোক্ত বিষয় সমূহের ব্যাপারে যথোপযুক্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চবি শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে।
সিএন/এমটি
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন