মোহাম্মদ আলী: পদ-পদবী ও নেতৃত্বের লোভ, গ্রুপিং, নিজেদের মধ্যে অনৈক্য, বিভেদ ও অন্ত কোন্দলে ক্ষত-বিক্ষত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে নেই কমিটি। এর ফলে গড়ে উঠেছে একাধিক গ্রুপ। এ সব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একাধিক নেতা। এতে করে স্থবির হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বশেষ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে গেছে। অন্ত কোন্দলে এ কমিটি থেকে বের হয়ে গেছেন একাধিক নেতা। তারা তৈরি করেছেন নিজেদের আলাদা বলয়।
জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাদের নিয়ে ৫০১ জনের ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি’ গঠন করে দেয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুস সালাম ভার্চুয়াল কনভেনশনের মাধ্যমে এ কমিটির ঘোষণা দেন। কমিটিতে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লুকে আহ্বায়ক ও সাদেক হোসেন খোকা স্মৃতি সংসদের প্রধান উপদেষ্টা মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টনকে সদস্য সচিব করা হয়। জিল্লুর রহমান জিল্লু সিলেট ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন চট্টগ্রামের অধিবাসী।
‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি’ সফল হলে এর মধ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির মূল কমিটি ঘোষণা আসত। তবে জিল্লুর রহমান জিল্লু ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন দায়িত্ব পাওয়ায় অনেকে এ কমিটিকে মেনে নেন নি। ফলে এ কমিটির মাধ্যমে দীর্ঘ ১২ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি’ থেকে বের হয়ে গেছেন কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস আহমেদ, যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ, যুগ্ম সদস্য সচিব কাজী আজম, যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন বাদল, প্রভাবশালী নেতা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। উনারা বের হয়ে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি’র মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
এ দিকে, সোমবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যুক্তরাষ্ট্রের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড ও ভোট বিহীন নির্বাচনের সমালোচনা করা হয়। এতে গিয়াস আহমেদ, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, গিয়াস উদ্দিন, এমএ বাতিন, মনসুর চৌধুরী, কামাল উদ্দিন জনি উপস্থিত ছিলেন। তবে এ সময় মঞ্চে নেতাদেরকে ১২ বছর আগের বিলুপ্ত কমিটির পদ-পদবী ধরে সম্বোধন করায় সংবাদ সম্মেলনে চেঁচামেচি ও শোরগোল সৃষ্টি হয়।
এ সময় তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, ‘আপনারা এভাবে বিলুপ্তর কমিটির পদ-পদবী নিয়ে সম্বোধন করতে পারেন না।’
পদপদবীর বিষয়ে বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১২ বছর আগে কমিটি গঠনের পর আর কোন কমিটি গঠন না করায় আমরা পুরানো পদে সবাইকে সম্বোধন করেছি।
এ সময় জিল্লু রহমান জিল্লু সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যানারে বিলুপ্ত কমিটির পদ-পদবী ব্যবহার করতে পারেন না এবং এ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেন না।’
এ দিকে সুবর্ণ জয়ন্তীকে নিয়ে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয় বিএনপি। সেই বিভক্ত কয়েকটি গ্রুপকে একত্রিত করেন পারবেজ সাজ্জাদ। অথচ সেই পারভেজ সাজ্জাদকে মঞ্চের বাইরে রেখে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি নেতা খলকুর রহমান।’
দলীয় কোন্দলের বিষয়ে যুবদল সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী বলেন, এখানে ইমিগ্রেন্ট সুবিধার জন্য বিএনপির বাইরে অনেক লোক দলে যুক্ত হয়েছে। অথচ মূলত তারা বিএনপির কেউ নয়। তাদের কারণে কোন্দল মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে।
বিএনপি নেতা মোতাহার হোসেন বলেন, যে কোন বড় দলেই কোন্দল আছে। বিএনপিতেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে বৃহৎ স্বার্থে বিএনপি নেতাদের এক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্নসম্পাদক কাজী আযম বলেন, অনেকদিন বিএনপির কমিটি না থাকায় দলীয় কোন্দলের কথা স্বীকার করেন। তবে হাইকমান্ড যদি কমিটি গঠন করে দেয় তাহলে কোন্দল থাকনবনা বলে আশা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যার কারণে দল চরম ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা করছেন বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবিরা।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন