চবি প্রতিনিধি: নানা আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আন্তর্জাতিক সর্প দিবস পালন করেছে স্ন্যাক অ্যাওয়ারনেস নামক একটি সংগঠন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়।
রোববার (১৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিবসটি উপলক্ষে লিফলেট বিতরণ, ক্যাম্পেইন ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করে সংগঠনটি।
প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ, প্রাণী ও আণুবীক্ষণিক জীবসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে তার জীবসমূহের সমাহারই জীববৈচিত্র্য। একটি সমাজ তৈরি করতে গেলে বিভিন্ন পেশার লোকের দরকার হয়, যারা নিজ নিজ কাজের দ্বারা সমাজকে টিকিয়ে রাখে। তেমনি একটি বাস্তুতন্ত্রের সুস্থায়ীভাবে টিকে থাকার জন্য জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজন হয়, যেখানে প্রত্যেক প্রজাতি তাদের নিজস্ব ভূমিকা পালন করে।আর এ বাস্তুতন্ত্রে সাপ অন্যতম প্রজাতি।সাপের কামড়ে যেমন মানুষের মৃত্যু ঘটে তেমনি সাপ ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় ভক্ষণ করে কৃষকের উপকারও করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্টে দেখা যায় বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ আশি হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। এছাড়া অন্তত ছয় হাজার মানুষ মারা যান।
এক সমীক্ষাতে দেখা গেছে, প্রতি বছর মে, জুন এবং জুলাই এই তিন মাস সাপের দংশন এবং তার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে। সাপে কাটলেই মানুষের মৃত্যু হবে এমন একটি প্রচলিত ভুল ধারণা চালু আছে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত সাপগুলোর ৭-৮ টি প্রজাতির সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু ঘটে। ফলে সাপে কাটলেই মৃত্যু হবে এমন ধারণা সঠিক নয়।
তবে, সাপ যদি দংশন করে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়, তা মূলত ভারতের তামিলনাড়ু থেকে আসে। সেখানকার সাপ এবং সাপের বিষের সাথে আমাদের দেশের সাপের বিষে ফারাক আছে। ভারত থেকে যে অ্যান্টিভেনম আনা হয়, তার মাত্র ২০ শতাংশ বাংলাদেশের সাপের সঙ্গে মেলে।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হচ্ছে, যেখানকার মানুষকে সাপ কেটেছে, সেখানকার স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি করে চিকিৎসা দিতে হবে। না হলে তা কার্যকর হয় না। তবে, প্রতি বছর বিশেষ করে বন্যার সময় সাপে কাটার প্রচুর ঘটনা ঘটলেও এখনো অ্যান্টিভেনম কেবলমাত্র জেলা শহর ও সদর হাসপাতালে রয়েছে।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালে অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং জার্মানির গ্যেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও গবেষক ড. আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী বলেন, “আগামী ২৪-২৫ সালের মধ্যে আমরা এন্টিভেনম তৈরির কাজ শুরু করতে পারব।
সর্পদংশন প্রতিরোধের বিষয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ভেনম সেন্টারের গবেষক রফিকুল ইসলাম চলমান নিউইয়র্ককে জানান “গণসচেতনতাই সর্পদংশন রোধের একমাত্র উপায়। সাপ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে হবে। সর্পদংশনের সাথে সাথে সময় বিলম্ব না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সর্বোপরী সচেতনতাই সর্পদংশনে মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে পারে”।
সিএন/এমটি
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন