শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

দেশের রাজনীতি চরম সংকটে

শুক্রবার, জুলাই ২১, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকলেও কোনো সরকারের অধীনে ভোট হবে, সে সুরাহা এখনো হয়নি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বড় দুই দলকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়ে এলেও কার্যত ফল হয়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সংকট নিরসনে পর্দার ভেতরে ও বাইরে দেশি-বিদেশি নানা মহলের তাগিদ ও তৎপরতায় বর্তমানে এ ক্ষেত্র ধীরে ধীরে প্রস্তুত হচ্ছে। তবে দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শর্তের যে বেড়াজাল টেনে রেখেছে, তাতে সংলাপ কতটা ফলপ্রসূ হবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সংলাপ আয়োজনে মধ্যস্থতাকারী নিয়েও আস্থার অভাব রয়েছে দলগুলোর মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের অনড় অবস্থান থেকে সরে এলে সংলাপের দরজা খুলতে পারে।

দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকরা গত কয়েক মাস ধরে পর্দার আড়ালে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। এখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে প্রভাবশালী দেশগুলো প্রকাশ্যে শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল এ ইস্যুতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরও করেছেন। জেয়া জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের পক্ষে হলেও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা যুক্ত হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করছেন। জানা গেছে, চলতি মাসেই ইইউ’র মানবাধিকারসংক্রান্ত আরও একটি দল বাংলাদেশে আসছে। এরপরও বড় দলগুলো নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থেকে সংলাপের যে মনোভাব প্রকাশ করছে, তা হতাশাজনক।

দেশে অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলাদা দুটি প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর কতটা কাজে দেবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে সংলাপ ছাড়া যে এর সমাধান হবে না, সে মতামত রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও আসছে। শনিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেছেন, সংলাপই সমাধান। এক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরই সংলাপে বসার উদ্যোগ নিতে হবে।

আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, বাইরের চাপের কারণে নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে স্ব-উদ্যোগেই সহিষ্ণুতার রাজনীতির চর্চা করতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় দল দুটি যে অবস্থান নিয়েছে তা পরিস্থিতিকে আরও সংঘাতময় করবে। অতীতে বিভিন্ন কারণে এবং ক্ষমতার পালাবদলের প্রেক্ষাপটে দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাসের পর মাস হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে সহিংসতায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। সে সময় দেশজুড়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদহানি হয়েছিল, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল অর্থনীতিতে। মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে নানা সংকটে রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক সংকট দূর করার জন্য আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তার অবসান হওয়া দরকার। এজন্য দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার ও বিরোধী, দুপক্ষই অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে সংলাপের টেবিলে বসবে-এটাই প্রত্যাশা।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন