ইফতেখার ইসলাম: প্রতি মাসে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রাত্যাশী বিভিন্ন পথে পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে। দেশটির মেক্সিকো সীমান্ত থেকে আসা বেশিরভাগ ইমিগ্রান্টদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। এবার সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস থেকে ইমিগ্রান্টদের জন্য জরুরি অর্থ ব্যায়ের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পর সৃষ্টি হয়েছে নতুন সমস্যা। এটি সমাধানে ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়েও কোন সমাধান মিলেছে কি-না, তা সন্দিহান। বরং বিভিন্ন বিষয়ে ব্যার্থতার কারণে ভোটার সমর্থন হারিয়ে অ্যাডামস যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি সিটি কম্প্রট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার মেয়রের জরুরি অর্থ ব্যয়ে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। ব্র্যাড ল্যান্ডারের ভাষ্যমতে, অ্যাডামস অর্থ ব্যায়ে স্বচ্ছতা দেখাতে পারেননি। তার জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসেও অ্যাডামসকে সতর্ক করা হয়েছিলো। এর পরে কোন পরিবর্তন না দেখা যাওয়ায় এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
কম্পট্রোলারের অফিস থেকে গত ৩০ নভেম্বর সিটির সকল দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ৩০ নভেম্বরের পর ইমিগ্রান্টদের সেবা কাজে ব্যয় বরাদ্দ সংক্রান্ত সকল চুক্তি করার আগে সিটিকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। জরেুরি অবস্থাজনিত ব্যয়ের নামে কম্পট্রোলারের অফিসের পূর্বানুমতি গ্রহণ ছাড়াই ব্যয় করার যে ক্ষমতা মেয়রের ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ইমিগ্রান্টদের জন্য প্রতিটি সেবা চুক্তি প্রথমে পৃথক পৃথকভাবে প্রথমে তার দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ইমিগ্রান্টদের খাতে ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও তদারকির অভাব রয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়রের জরুরি ব্যয়ের ক্ষমতার আওতায় ১.৭ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করা হয়েছে। এই ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ, বা ১.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় ছিল ইমিগ্রান্টদের বিভিন্ন সেবার জন্য।
ব্র্যাড ল্যান্ডারের মুখপাত্র ক্লো চিক বলেছেন, মেয়রের জরুরি ব্যয় ক্ষমতা প্রত্যাহার করা সিটির চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়ায় চরম ব্যর্থতার পরিচয়। তবে আমরা জরুরি পরিস্থিতিতে সম্পাদিত চুক্তিগুলোর দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙক্ষ পর্যালোচনা অব্যাহত রাখবো।
এদিকে অ্যাডামস প্রশাসনের একজন মুখপাত্র চার্লস ক্রেচমার লুটভাক বলেছেন, এখনো প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার নতুন ইমিগ্রান্ট নিউইয়র্ক সিটিতে আসছেন। কিন্তু কম্পট্রোলার আমাদের হাত পিঠের পেছনে বেঁধে দিয়ে নবাগত ইমিগ্রান্ট এবং যেসব ইমিগ্রান্ট দীর্ঘদিন থেকে সিটিতে রয়েছেন তাদের প্রতি অন্যায় করেছেন। তার পদক্ষেপ ইমিগ্রান্টদের সেবাদানের প্রতিটি পদক্ষেপকে মন্থর করবে।
সাহায্য পেতে ছুটলেন ওয়াশিটংনে
এদিকে জরুরি ব্যায়ের ক্ষমতায় বাধাপ্রাপ্তির পর দেশটির রাজধিানী ওয়াশিংটন ডিসিতে গেছেন মেয়র এরিক অ্যাডামস। যদিও গত ২ নভেম্বর এসব বিষয়ে তার আলোচনার কথা ছিলো। কিন্তু তখন তার বাড়িতে অভিযান চলায় ফিরে আসতে হয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান অ্যাডামস। এদিন তিনি শহরের অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা করতে কংগ্রেস নেতা এবং বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন।
অ্যাডামস নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতাদের সাথে সাক্ষাত করেছেন। যার মধ্যে-সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার এবং হাউস সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিস ছিলেন। তিনি ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির প্রধান ডিন ক্রিসওয়েলের সাথেও দেখা করেছেন।
ওয়াশিংটনে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি সফরের সময় রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাত চেয়েছিলেন বা শীঘ্রই তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। অ্যাডামস বলেন, যতবার আমি ডিসিতে আসি আমি রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করার অপেক্ষায় থাকি। আমরা এই বিষয়ে কথোপকথনের জন্য রাষ্ট্রপতির সাথে বসতে চাই।
অ্যাডামস বলেন, আমি আশা করি ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আরও সহায়তা পাওয়অর। যা দিয়ে নিউইয়র্ক সিটির বাড়ি এবং অভিবাসীদের বিশাল খরচ মিটে করা। আমি বিশ্বাস করি ফেডারেল সরকারের উচিত আগামী তিন বছরে অভিবাসী পরিস্থিতি মোকাবেলার ব্যায় বহন করা। যেহেতু অভিভাসন একটি রাষ্ট্রীয় সমস্যা তাই এর ব্যায়ভারও সিটির নাগরিকদের ওপর পড়া উচিত নয়।
নিউইয়র্ক সিটি অফিস অফ ম্যানেজমেন্ট এবং বাজেট ডিরেক্টর জ্যাক জিহার একটি অনুমান অনুসারে আগামী তিন বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
সমর্থন কমছে অ্যাডামসের
এদিকে বিভিন্ন বিষয়ে অ্যাডামসের ওপর নাখোশ সিটির সাধারণ জনগণ। যার ফলে তার সমর্থন দিন দিন কমছে। যদিও মেয়র নির্বাচনের এখনও দুই বছর বাকি থাকায় এসব বিষয় নিয়ে তেমন শঙ্কা নেই বলে মতামত বিশ্লেষকদের।
সম্প্রতি প্রকাশিত কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির এক জরিপে দেখা যায়, অ্যাডামসের সমর্থনের হার ২৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ভোটাররা প্রায় সবকিছু নিয়ে অসন্তুষ্ট।
৬০ শতাংশ লোক তার অপরাধ সামলানো নিয়ে নাখোশ।
৫২ শতাংশ লোক তার স্কুল নীতি পছন্দ করে না।
৬৬ শতাংশ লোক তার বাজেট দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
৬৬ শতাংশের কাছে তার অভিবাসন নীতি পছন্দ না।
জরিপের তথ্য মতে, অ্যাডামস আর নিউইয়র্কবাসীদের চোখের মণি নয়। তার প্রধান তহবিল সংগ্রহকারীর বাড়িতে এফবিআইয়ের অভিযান, অভিবাসন সংকট মোকাবেলাসহ বিভিন্ন বিষয় তার জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিয়েছে।
এসব বিষয়ে অ্যাডামস কিছু না বললেও ডেপুটি মেয়র ফ্যাবিয়েন লেভি বলেন, শহরের অপরাধ কমে গেছে এবং চাকরি বেড়েছে। জরিপের তথ্য ভুল ও অপরিপক্ক।
তিনি বলেন, কোন প্রশ্নই নেই মেয়র অ্যাডামসের নেতৃত্বে এই শহরটি আরও ভাল জায়গায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিউইয়র্কে প্রতিমাসে গড়ে ১০ হাজার নথিপত্রহীন অভিবাসীর আগমন ঘটছে। বাইডেন প্রশাসনের বিপর্যয়কর অভিবাসন নীতির কারণে নিউইয়র্কের মতো সিটির অবস্থা নাজুক হয়ে উঠেছে। আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন, খাবার এবং পরিষেবা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিটি প্রশাসনকে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থল সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের প্রবাহ শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সমস্থ চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ২০২২ সালের বসন্তের পর থেকে এ পর্যন্ত নিউইয়র্কে লক্ষাধিক অভিবাসীর আগমন ঘটেছে।
.
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন