বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে পদোন্নতি না পাওয়া সুবিধাবঞ্চিত সরকারি কর্মচারীরা

শনিবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১

প্রিন্ট করুন
chalaman newyork 5 1

ঢাকা: পদ পদবী পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নতিকরণ না হওয়ায়, একই পদে দীর্ঘ দিন চাকরি করে অবসর গ্রহণ করা এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন তৃৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিরা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মো. আকরাম খা হল মিলনায়তনে শনিবার (৪ সেপ্টম্বর) সকালে  বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এতে সংগঠনের নেতা কর্মীরা জানান, চাকরি জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই পদে কাজ করছেন মাঠ প্রশাসনের ১১ হাজারেরও  বেশি কর্মচারী। এ বৈষম্যের অবসান চেয়ে দুই দশক ধরে নানাভাবে আন্দোলন করছেন তারা। পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী,  জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বহুবার। মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন দীর্ঘ দিন। এক পর্যায়ে এ দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি নির্দেশনা দেয়, সুপারিশ করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি।

এ দিকে, সচিবালয়ে সমপদের কর্মচারীদের পদবি ও গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। তবে একই পদে থাকলে ভাগ্য বদলায়নি মাঠ প্রশাসন কর্মচারিদের। প্রধান মন্ত্রী বিষয়টি প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য সারসংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছিলেন। এরপর সচিব কমিটিতে সেটি  উপস্থাপনও করা হয়েছিল। তবুও পরিবর্তন আসেনি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিদের পদবি ও গ্রেড।

এ দিকে, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইউএনওর কার্যালয়, ভুমি অফিসের কর্মচারিদের পদ-পদবী পরিবর্তনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ৩১ মার্চ অর্থ মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী গত ৩০জুন অর্থ মন্ত্রনালয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু  অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে দ্রুত নিস্পত্তির জোর দাবি জানান সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

তারা জানান, দুই দশক ধরে আন্দোলনের পরও মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের পদোন্নতি না হলেও বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য দপ্তরে সমপদের ২১ ধরনের  কর্মচারীর পদবি ও গ্রেড পরিবর্তন করেছে সরকার। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালের ১৯ মে সচিবালয়ের প্রায় দুই হাজার তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির র্কর্মকতা পদে উন্নীত করা হয়। সংসদ সচিবালয়ের ক্যাটালগারদের ১৪ গ্রেড থেকে ১১ গ্রেড, খাদ্য অধিদপ্তরের প্রধান সহকারীদের গ্রেড ১৩ থেকে ১০-এ, বাংলাদেশ সচিবালয়ের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে পার্সোনাল অফিসার, প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের ফরাস থেকে অফিস সহায়ক এবং সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের এমএলএসএস থেকে অফিস সহায়ক, সুইপার ও ঝাড়ূদারদের পরিচ্ছন্নকর্মী, নৈশ প্রহরীদের নিরাপত্তাকর্মী পদে রূপান্তর করেছে সরকার।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৩০ মে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগে কর্মরত তহশিলদারদের ১৬  গ্রেড থেকে ১১ গ্রেডে পদোন্নতি দিয়ে ইউনিয়ন ভূমি সরকারি কর্মকর্তা এবং সহকারী তহশিলদারদের ১৭ গ্রেড থেকে ১২ গ্রেডে পদোন্নতি দিয়ে  ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা করা হয়। নির্বাচন অফিসের ১৬ গ্রেডের কর্মচারিদের নবম গ্রেডের কর্মকর্তা করা হয়েছে। এর ফলে বিভাগীয়  কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসক কার্যালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসের কার্যালয়, উপজেলা ভুমি অফিসের কার্যালয়গুলোতে কর্মরত কর্মচারিদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

এরপর পদোন্নতির ওই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে জটিলতা নিরসনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ, জনপ্রশাসন, অর্থ ও ভূমি সচিবের  সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু অর্ধ যুগ পার হলেও সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পাঠানো প্রস্তাব ও ব্যাখ্যা বাাস্তবায়ন করণের জন্য সংবাদ সম্মেলনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ করা হয়।  অন্যথায় আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন