শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বাংলাদেশ এখন শিল্প সমৃদ্ধে আরো উন্নত

শনিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১

প্রিন্ট করুন
মো. রফিকুল ইসলাম 1

মো. রফিকুল ইসলাম: এক সময় যে দেশটি  তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে আখ্যায়িত ছিল, এখন বলা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই দেশটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে দেশটি এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৫ সালে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হতে তিনটি শর্ত রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথম বারের মত বাংলাদেশ তিনটি শর্তই পূরণ করে। পরে ২০২১ সালেও তিনটি শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয় দক্ষতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী কোন দেশ পর পর দুইটি ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ সেই সুপারিশ পেয়েছে। জাতিসংঘের তিনটি শর্তের প্রথমটি হচ্ছে মাথাপিছু আয়, এরপর অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং সবশেষে মানবসম্পদ উন্নয়ন।

শুরুতে কৃষি খাতে এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখলেও ৮০’র দশক থেকে সেখানে মূল ভূমিকা রাখতে শুরু করে শিল্প খাত। কৃষি নির্ভরতার পাশাপাশি দেশ এখন শিল্প নির্ভরতার দিকে এগুচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহায়তায় বেসরকারি খাতের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপিতে শিল্পের অবদান প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বাংলাদেশ আজ এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। পরপর তিন অর্থ বছরে সাত শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে আট দশমিক এক-পাঁচ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে আট দশমিক দুই শতাংশ। দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয়, শিল্পসমৃদ্ধ দেশ গঠনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলে, আশা করা যায়।

করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের এবারের বাজেটে সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এবারের বাজেটে সহায়তা শুধু রাজধানীর মধ্যেই নয়, ঢাকার বাইরেও শিল্প বিকাশে সরকার মনোযোগী। এজন্য রাজধানীর বাইরেও শিল্প বিকাশে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। বেসরকারি খাতের বিকাশে দেশের শিল্প খাতে ঘটছে বিপ্লব। ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি, বৃহৎ, এমনকি ভারি শিল্পের বিকাশ ঘটছে বেসরকারি খাতের মাধ্যমেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠছে ক্লাস্টারভিত্তিক ছোট ছোট শিল্পকারখানা। স্বাধীনতার পর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উল্লেখ করার মত একমাত্র শিল্প ছিল পাটশিল্প। এরপর পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠেছে তৈরি পোশাকশিল্প, যা এখনো মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে। এখাতে অন্তত সরাসরি ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। আর ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজসহ প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান এখাতের ওপর নির্ভরশীল, যার পুরোটাই বেসরকারি খাতের ওপর দাঁড়িয়ে। আর কৃষিভিত্তিক শিল্প, রড, সিমেন্ট, বিভিন্ন ধরনের রং, রাসায়নিক, ওষুধ, জাহাজভাঙা ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ বহু শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে সময়ের ব্যবধানে। গত এক দশকে শিল্পায়নে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেড়েছে কয়েক গুণ। বেড়েছে কর্মসংস্থান। ফলে আমূল পরিবর্তন এসেছে রপ্তানি খাতে। গত এক দশকে রপ্তানি আয় বেড়েছে কয়েক গুণ। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) তত্ত্বাবধানে সারা দেশে গড়ে উঠছে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল। শুধু চট্টগ্রামের মিরেরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর সোনাগাজী জুড়ে ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে উঠছে সুপরিকল্পিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী। বৃহত্তম এ শিল্পনগরে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন করছে বেজা।
২০৩০ সালের মধ্যে এটির কাজ শেষ হবে। অবশ্য চলতি বছরের মধ্যেই অন্তত ২০টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি উৎপাদনে যেতে কারখানা স্থাপনের কাজ করছে অবিরাম। এক সময়ের কৃষি প্রধান দেশ হতে যাচ্ছে শিল্পসমৃদ্ধ। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেছেন, ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বড় ভূমিকা রাখবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। বড় বড় উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর হবে দেশের সবচেয়ে সুন্দর শিল্পশহর। বৈচিত্র্যময়, আধুনিক ও সবুজ এ শিল্পনগরে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসবেন উদ্যোক্তারা।’  

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী ২০০০-০১ অর্থ বছরে মোট দেশজ উৎপাদনে শিল্প খাতের অবদান ছিল ২৩ দশমিক চার শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক পাঁচ শতাংশ। চলতি বছরের শেষে এটি ৩৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে, আশা করা হচ্ছে। 

দেশের কর্মক্ষম সাড়ে আট কোটি মানুষের অন্তত ৮০-৮৫ শতাংশেরই জীবিকা জড়িত বেসরকারি খাতের সঙ্গে। ফলে বেসরকারি খাতই হয়ে উঠেছে শিল্পের চালিকা শক্তি। দেশে শিল্পের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৮ হাজারের বেশি। এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত আড়াই কোটি মানুষ। এর পুরোটাই বেসরকারি খাতের হাত ধরে প্রসারিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড এসএমই ফোরামের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের হাত ধরে ৭৮ লাখ শিল্পের মধ্যে ৬০ লাখ ৮০ হাজারই কুটির শিল্প। এ ছাড়া ক্ষুদ্র শিল্প এক লাখ দশ হাজার, আট লাখ ৫০ হাজার, মাঝারি শিল্প ৭১ হাজার আর বৃহৎ শিল্প রয়েছে ৫২ হাজার। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পঞ্চম স্থানে থাকা বাংলাদেশ এসএমই শিল্পসংখ্যায় বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে। এখন দেশে এসএমই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭৩ লাখ। এ দিকে সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মিরেরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী জুড়ে ৩০ হাজার একরের বেশি জমিতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী। বৃহত্তম এ শিল্পনগরীতে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন করছে বেজা। এখানে ৬২টি কোম্পানিকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পোশাক খাতের ৪১টি এবং এর বাইরে আরো দশটি কোম্পানির সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন জমি ভরাটসহ প্রাথমিক কাজ করছে। এসব জায়গায় এবছর আরো ২০টি শিল্প নির্মাণের কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছে। এখানেই অন্তত ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে, আশা করা হচ্ছে। এ শিল্পনগরীতে বড়ো বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এসেছে চীনের জিয়াংসু ইয়াবাং, জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি), সিসিইসিসি বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার এইচএ টেক, ভারতের রামকি এনভার সার্ভিস, জার্মান ও ভারতের যৌথ অংশিদারিত্বে ফরটিস গ্রুপ, নেদারল্যান্ডসের লাইজার্ড স্পোটর্স, সিঙ্গাপুরের ইন্টার এশিয়া গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানি। দেশি কোম্পানির মধ্যে মেট্রো স্পিনিং, ম্যাকসন্স স্পিনিং ও টেক্সটাইল, সামুদা ফুড, উত্তরা মোটরস, বিজিএমইএ, সায়মান বিচ রিসোর্ট, ম্যাফ সুজ, বিজিএপিএমইএ, এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক, ইফাদ অটোস, রানার মোটর, সাইফ পাওয়ার, ডেল্টা ফার্মা, এশিয়া কম্পোজিট মিলসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। আর এর সবই বিস্তৃত হবে সরকারি সহায়তায় বেসরকারি খাতের হাত ধরে। এ দিকে, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে পোশাক পল্লিতে যাচ্ছে ৪১ কোম্পানি। এসব কোম্পানির ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। 

আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে শিল্পের দিকে অগ্রসর হয়েছে। শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই সারাদেশে ১০০ ইকোনমিক জোন স্থাপনের কাজ চলছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ শেষ হবে। ইতিমধ্যে আমরা কৃষিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে শিল্পনির্ভরতার দিকে ঝুঁকেছি। তবে এর পেছনে সরকারের বহুমুখী সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

চলমান করোনা মহামারিতেও বিশ্ব দরবারে সরব উপস্থিতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা মোকাবিলা করেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তার ভূমিকা প্রশংসা কুড়াচ্ছে বিশ্ব নেতাদের। পাশাপাশি বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একের পর এক বক্তব্য ও প্রস্তাব দৃষ্টি কেড়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক ধীশক্তি ও দূরদর্শিতার যোগ্য উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মীমাংসা, আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর নেতৃত্ব প্রদান, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদান- এ বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে পৃথিবীর অনেক প্রখ্যাত নেতা এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। বিশ্বে প্রশংসার আসনে এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) গত সভায় এ জন্য চার হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংক ৩৯৬৭ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন বেজা চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।  প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের আওতাধীন মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের পারিপার্শ্বিক এলাকায় অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের টেকসই ও পরিবেশ সহনীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ফলে দেশীয় ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, দ্রুত শিল্পায়ন, পণ্যবহুমুখীকরণ, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীসহ ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে বিধায় তা দারিদ্র্যমোচনে সহায়ক হবে।

বেজা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মাধ্যমে ৯৯০ দশমিক ৪১ একর ভূমি উন্নয়ন, এক দশমিক ২৭ লাখ বর্গমিটার বৃক্ষরোপণ ও ট্রি-গার্ড, ইনভেস্টর ক্লাব নির্মাণ, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার, মসজিদ নির্মাণ, ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার, দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র, শিশু পরিচর্যা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ড্রেনেজ অবকাঠামো (স্টর্ম ওয়াটার), ৪০ কিলোমিটার স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক, ২৮ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা ব্যবস্থাদি এনভায়রনমেন্টাল ল্যাব ও মনিটরিং সিস্টেম, বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (সিইটিপি), ডিস্যালাইনেশন প্লান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বায়োগ্যাস প্লান্ট, ওয়েস্ট সোর্টিং ফ্যাসিলিটি, রুফটপ ও ফ্লোটিং সোলার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হবে।

অর্থনৈতিক স্থবিরতার বছরেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে। বেজা সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী বছরের জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০৮ কোটি ডলার বা ৩৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা সমপরিমাণ (এক ডলার সমান ৮৫ টাকা হিসেবে) বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে। গেল ২০২০ সালের পুরোটা জুড়েই করোনার আঘাত অর্থনীতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সারা বিশ্বে বছরের শুরুতে লকডাউন এবং স্থবিরতা শুরু হলেও বাংলাদেশে মূলত মার্চ মাস থেকে বিরূপ প্রভাব শুরু হয়। দীর্ঘমেয়াদে ছুটি এবং লকডাউনের প্রভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেমে আসে স্থবিরতা। নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা ছিল বছর জুড়েই। এর পরেও আশার আলো জুগিয়েছে বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো। বেজা গভর্নিং বোর্ড ইতোমধ্যে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্ধারণ ও জমির পরিমাণ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ৬৮টি এবং বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ২৯টি। 

বেজা সূত্রে জানা যায়, গত বছর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনাকালে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা হয়েছে প্রায় ৩১৫ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ (২৬ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা)। যার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব প্রায় ৫৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার (৪ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা) এবং স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ২৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার (২২ হাজার ৭৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। মোট বিনিয়োগের প্রস্তাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭০৭ কোটি মার্কিন ডলার (দুই লাখ ৩০ হাজার ৯৫ কোটি টাকা) প্রস্তাবিত বিনিয়োগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায় দশ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে, আশা করা হচ্ছে।

পিআইডি ফিচার/চলমান নিউইর্য়র্ক/মোহাম্মদ আলী

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন