সিএন প্রতিবেদন: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলন নিয়ে এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। চলতি মাসের শুরু থেকে সড়ক-মহাসড়ক এমনকি রেলপথ অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ করলেও সেই অর্থে কোনো বাধা দেয়নি পুলিশ। সরকার বা ক্ষমতাসীনেরাও মোটামুটি চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে বদলে গেল পরিস্থিতি। সব পক্ষের গলা চড়া। সবাই জোরেশোরে জানিয়ে দিল, শিক্ষার্থীদের আর রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। তবে শিক্ষার্থীরাও পাল্টা জানিয়ে দিল দাবি আদায় ছাড়া আন্দোলন থামাবে না তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আগের দিন বুধবারই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকাসহ সারা দেশে রাস্তায় ‘বাংলা ব্লকেড’ বা অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন। সে অনুযায়ী তাঁদের প্রস্তুতির মধ্যেই সকালে পুলিশ জানিয়ে দেয়, তাঁদের আর রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন, তারপরও আন্দোলনের কোনো ‘যৌক্তিকতা নেই’। আন্দোলনকারীদের সড়কে বসতে দেওয়া হবে না। তাঁরা রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে ‘প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে’ বাধ্য হবে পুলিশ।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন বলেন, কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্রকে বলবৎ রেখে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। যে কারণে এই চার সপ্তাহ কোটা নিয়ে আন্দোলন করার কোনো অবকাশ বা প্রয়োজন আছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ মনে করে না। রাস্তায় নেমে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুপুরের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন ডাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেখানেও বলা হয়, কোটা আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক ও আইনগত সমাধান চায়; কিন্তু রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানীরা এই আন্দোলনকে প্রলম্বিত করতে চাইছে। আন্দোলনকে প্রলম্বিত করা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে, আন্দোলনকারীরা সীমা লঙ্ঘন (লিমিট ক্রস) করছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আদালতের যে নির্দেশনা তাতে শিক্ষার্থীরা মনে করেছেন, তাঁদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে জন্য তাঁরা রাস্তায় চলে এসেছেন। পুলিশকে আমরা বলেছি, তাঁদের ডিম্যান্ড যেটা আছে, সেটা আমরা শুনব। কিন্তু শোনারও একটা লিমিট বোধ হয় থাকে। তাঁরা বোধ হয় এগুলো ক্রস করে যাচ্ছেন।’
শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁরা শিক্ষিত, মেধাবী। তাঁরা কেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাবেন? পুলিশের অ্যাকশনটা কখন আসে? যখন অপারগ হয়ে যায়, যখন অগ্নিসংযোগ করতে যায়, যখন ধ্বংস করতে যায়, যখন জানমালের নিশ্চয়তার অভাব হয়ে যায়, যখন অনৈতিকভাবে কোনো সিচুয়েশন সৃষ্টি হয়—সেগুলো করলে পুলিশ বসে থাকবে না।।
এদিকে সরকারের এমন কঠোর অবস্থানেও পিছু না হটার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তারা জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন দেশজুড়ে চলবে।
সিএন/এমটি
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন