বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামের সাথে চুক্তি সই

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১

প্রিন্ট করুন
242396164 3065530450324994 3673671360786185154 n 1

ঢাকা: দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামের সাথে কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইটেনেন্স এগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীগণের সাথে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক এ কার্যক্রম শুরু হলে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে এ চুক্তি সই উপলক্ষে ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশের অনন্য এ কার্যক্রমের যাত্রা ঘোষণা করেন। ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হবে বলে তিনি জানান। এর ফলে দেশে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে বলে মন্ত্রী প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ।

প্রধান অতিথির মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আগামী দিনে ডিজিটাল সংযুক্তির বর্ধিত চাহিদা পুরণের মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার সাথে সিমিউই-৬ নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনে অভাবনীয় অবদান রাখবে।’ তিনি তৃতীয় সাবমেরিন ক্যবল সংযুক্তি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ অগ্রযাত্রায় একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন।

বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং সিমিউই-৬ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কামাল আহমেদ বক্তৃতা করেন।

মোস্তাফা জব্বার সাবমেরিন ক্যাবলকে দেশের অত্যন্ত অপরিহার্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বিনা মাশুলে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তৎকালিন সরকার বাংলাদেশকে ১৪ বছর তথ্য প্রযুক্তি দুনিয়া থেকে পিছিয়ে রাখে। ২০০৮ সালে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির হাত ধরে সেই পশ্চাদপদতা অতিক্রমই বাংলাদেশ কেবল করেনি বরং হাওর, দ্বীপ চরাঞ্চল ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রড ব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। দেশে ২০০৮ সালে মাত্র আট জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হত এবং ব্যবহারকারি ছিল মাত্র সাত লাখ।’

কম্পিউটারে বাংলা ভাষার প্রবর্তক মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ১১ কোটি  মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং দুই হাজার ৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশের আরো একটি ঐতিহাসিক অর্জন।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ প্রবেশ করেছিল আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংযুক্তির যুগে। বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ছাড়াও আইটিইউ, ইউপিইউ এর সদস্যপদ এবং টিঅ্যান্ডটি বোর্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ বপন করে গেছেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার যুগান্তকারি ভিশনারি নেতৃত্বে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদের দিক নির্দেশনায় গৃহীত যুগান্তকারি বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত  স্থাপন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতি সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশ নামটি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে  হ্যানরি কিসিঞ্জার যে বাংলাদেশকে তাচ্ছ্বিল্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা সেই বাংলাদেশকে অনুসরণের জন্য তার পিতৃভূমি কেনিয়াবাসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এটাই হল বাংলাদেশের অর্জন- শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্প।’

ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত মোস্তাফা জব্বার মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু এবং তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সফলতা তুলে ধরে বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৯ সাল থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। সাব সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের তিনটি প্রস্তাবকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে একনেক সভায় তা অনুমোদিত হয়। পরবর্তী বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারী কারণে কনসোর্টিয়াম কর্তৃক সরবরাহকারী নির্বাচনে বেশ বিলম্ব হয়। ফলে গত ডিসেম্বরের মধ্যে কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবিত  কার্যাবলীটি চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে নির্ধারষ করা হয়।  

মো. আফজাল হোসেন সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। কনসোর্টিয়ামের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিজ নিজ দেশ থেকে অনুরূপ চুক্তিতে সই করে কনসোর্টিয়ামের অস্থায়ী সদর দপ্তর সিংগাপুরে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠাবেন।

মশিউর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিএসসিসিএল কুয়াকাটায় দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু করে। এ ক্যাবলটির সক্ষমতা প্রথম ক্যাবলটি হতে অনেক বেশি। তথাপিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দ্বায়িত্ব নেয়ার পরপরই মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আমাকে বলেন যে, দেশে যেভাবে ব্রডব্যান্ড সেবার প্রসার হচ্ছে, তাতে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতাও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। এ কথা বলে তিনি আমাকে দ্রুত তৃতীয় একটি সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযোগের উদ্যোগ নিতে বলেন। আজ দেশে দুই হাজার ৭০০ জিবিপিএসের বেশী আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ব্যাবহৃত হচ্ছে, যার মধ্যে বিএসসিসিএল একাই সরবরাহ করছে প্রায় এক হাজার ৬৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ।’

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে প্রথম সাবমেরিন  ক্যাবল কমিশনিং করা হয়। ২০২৪ সাল নাগাদ দেশে ছয় হাজার জিবিপিএসের বেশী আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে। ইতিমধ্যে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিএসএনএলের কাছে দশ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানীর জন্য নূতন করে চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়া বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম দিকের তথা ইউরোপের দিকের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ দীর্ঘমেয়াদে লীজ দেয়ার জন্য সৌদী আরব ও ফ্রান্সের সাথে দুইটি চুক্তি সই করেছে, মালয়েশিয়ার সাথে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই প্রক্রিয়াধীন আছে।

সিমিউই -৬ কনসোর্টিয়ামে যোগদানকারি ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিংটেল সিঙ্গাপুর, বিএসসিসিএল বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া, এসএলটি শ্রীলংকা, ধিরাগু মালদ্বীপ, এনআইটুআই ভারত, টিডব্লিউএ পাকিস্তান, জিবতি টেলিকম, জিবতি. মবিলিঙ্ক-সৌদি আরব. চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল, চায়না টেলিকম গ্লোবাল লিমিটেড চায়না, ইউনিকম চায়না, মাইক্রোসফট যুক্তরাষ্ট্র, টেলিকম ইজিপ্ট মিশর এবং অরেঞ্জ ফ্রান্স।

চলমান নিউইয়র্ক/মোহাম্মদ আলী

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন