রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শিরোনাম

ইসলামে অন্যের অধিকার রক্ষা ও কষ্ট না দেয়ার আহ্বান

শনিবার, ফেব্রুয়ারী ২২, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ইসলাম ডেস্ক: আজকাল মানুষকে কষ্ট দেয়া যেন এক ধরনের সহজলভ্য অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নিজের অজান্তেই ঘরবাড়ি, চলাফেরা, কথাবার্তা ও নানা কর্মকাণ্ডে অন্যদের ওপর অত্যাচার করি। কখনও হয়তো নোংরা ভাষা ব্যবহার করি, কখনও তাদের অধিকার লঙ্ঘন করি, অসম্মান করি, বা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করি।

‎‎আমরা এমনকি এক কাজের কথা বলে অন্য কাজ যুক্ত করি, এমনকি কর্মক্ষেত্রে অযথা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা বা জুলুম করা চলাফেরায় অন্যকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, বা অন্যের অনুমতি ছাড়া তাদের সম্পদ গ্রহণ করা, যা তাদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে। এসব আচরণ আমাদের সমাজে অসম্মান এবং অশান্তি সৃষ্টি করে, হোক সেটা সামাজিক ক্ষেত্রে কিংবা কর্মক্ষেত্রে যা সকলের জন্য ক্ষতিকর।

‎‎এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ بِغَیۡرِ  مَا اکۡتَسَبُوۡا فَقَدِ احۡتَمَلُوۡا بُہۡتَانًا وَّ  اِثۡمًا مُّبِیۡنًا. ‎অর্থাৎ- ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ -সুরা  আহযাব : ৫৮

‎আল্লাহ আরও বলেন, ‘وَ مَنۡ یَّکۡسِبۡ خَطِیۡٓىـَٔۃً اَوۡ اِثۡمًا ثُمَّ یَرۡمِ بِہٖ بَرِیۡٓــًٔا فَقَدِ احۡتَمَلَ بُہۡتَانًا وَّ اِثۡمًا مُّبِیۡنًا. ‎অর্থাৎ যে ব্যক্তি ভুল কিংবা গোনাহ করে, অতঃপর কোনো নিরপরাধের ওপর অপবাদ আরোপ করে, সে নিজের মাথায় বহন করে জঘন্য মিথ্যা ও প্রকাশ্য গোনাহ। (সুরা নিসা: ১১২)

এছাড়াও আল্লাহ আরো বলেন,  ‘وَ اَوۡفُوۡا بِالۡعَہۡدِ ۚ اِنَّ  الۡعَہۡدَ  کَانَ  مَسۡـُٔوۡلًا. ‎অর্থাৎ- আর অঙ্গীকার পূরণ করো, নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (‎সুরা: বনি ইসরাঈল: ৩৪)

আল কোরআনুল কারিমে আল্লাহ এই তিনটি আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। এই আয়াত থেকে আমরা বুজতে পারি মানুষকে কষ্ট দেওয়া পাপ! এছাড়াও হাদীসে রসুল সা. এই বিষয়ে বলেন।

‎ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى ضَيْفِهِ. ‎রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দোজখ থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ করতে চায়, সে যেন আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে, যে ব্যবহার সে নিজে অন্যের কাছে আশা করে। (রিয়াজুস সালেহিন : ১৫৬৬)

‎الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ. ‎রসুল (সা.)বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি : ১০)

‎عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: رَأَى رَجُلٌ فِي الطَّرِيقِ شَجَرَةً تُؤْذِي النَّاسَ فَأَزَالَهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

রসুল (সা.) বলেছেন, ‎‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন সে রাস্তার ওপর একটি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে দিল। আল্লাহ তার এই ভালো কাজটি পছন্দ করেন ও তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (মুসলিম: ৬৪৩১)

‎কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে অন্যকে কষ্ট দেওয়া, মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা ও অধিকার লঙ্ঘন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব আচরণ সমাজে, কর্মক্ষেত্রে অশান্তির কারণ হতে পারে। মুসলিম হিসেবে আমাকে করণীয় হলো উপরে আয়াত ও হাদীসগুলো অর্থ বুঁজে উপলব্ধি করা। নিজেকে সংশোধন করা।

সিএন/আলী

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন