বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

শিরোনাম

‘তাণ্ডব’: মুখোশের আড়ালে সমসাময়িক বাংলাদেশের প্রতিচিত্র

সোমবার, জুন ১৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ফরিদা ইয়াসমীন: তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফির পরিচালনায় ‘তাণ্ডব’ শুধু একটি সিনেমা নয়—এ যেন সমাজ, রাজনীতি এবং ব্যক্তিজীবনের সংকীর্ণ চেতনার এক নগ্ন প্রতিবিম্ব। এই ছবিতে মুখোশ পরে শাকিব খান শুধু চরিত্রে অভিনয় করেননি, বরং সেই মুখোশের আড়াল থেকেই উন্মোচিত হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশের নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা।

‘তাণ্ডব’–এ শাকিব খানের অভিনয় নতুন মাত্রা পেয়েছে। তাঁর সংলাপ বলার ভঙ্গি, চলাফেরার স্মার্টনেস ও চরিত্রে ডুবে যাওয়ার দক্ষতা দর্শকদের মনে করিয়ে দেয়—তিনি বাংলা সিনেমার ‘কিং খান’ হিসেবেই আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

চিত্রনাট্য শুরু হয় ‘চ্যানেল বাংলা’ নামের এক টিভি স্টেশনের লাইভ সাক্ষাৎকার দিয়ে। মঞ্চে মন্ত্রী, বাইরে হঠাৎ শুরু হয় গোলাগুলি। দৃশ্যপটে হাজির হয় মুখোশধারী অস্ত্রধারীরা। গুলিবিদ্ধ হন মন্ত্রী, জিম্মি হন টিভি স্টেশনের সবাই। আর এই চরম উত্তেজনার মুহূর্তে ‘স্বাধীন’ চরিত্রে প্রবেশ করেন শাকিব খান, যিনি বললেন—“চলুন, নতুন করে শুরু করা যাক!”

এই ‘নতুন শুরু’ থেকেই সিনেমা মোড় নেয় অন্যদিকে। স্বাধীন মুক্তিপণের বদলে দাবি জানান চারজন ভিন্ন পেশার মানুষকে হাজির করতে—ধর্মমন্ত্রী, সাবেক আইজিপি, টিভি মালিক এবং একজন সাংবাদিক। টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারিত হতে থাকে তাঁদের কথোপকথন, তর্ক ও একে অপরকে দোষারোপের দৃশ্য। একজন একটি চেয়ারে বসবেন—এই বিষয়কে কেন্দ্র করে দেখা যায় রাজনীতি, প্রশাসন ও মিডিয়ার চরিত্রের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

স্বাধীন চরিত্রের মাধ্যমে উঠে আসে চাকরিবঞ্চিত, অবমূল্যায়িত এক মধ্যবিত্ত তরুণের গল্প। সৎ বাবার সংসারে বেড়ে ওঠা এই যুবক মেধা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পায় না, প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়, প্রেমিকার আত্মহত্যায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একসময় পুলিশ তাকে সন্ত্রাসী সন্দেহে ধরে নিয়ে গুম করে। পরে জানা যায়, কারাগার থেকে পলাতক এক শীর্ষ সন্ত্রাসী স্বাধীন নামেই পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।

ছবির শেষ অংশে চমক আসে। দেখা যায়, এই ‘স্বাধীন’ আসলে শীর্ষ সন্ত্রাসী মিখাইল, যিনি ব্যাংক লুট করে গা ঢাকা দেয় গোপন সুরঙ্গপথে। তার সঙ্গে জড়িত রাজনীতিক, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।

‘তাণ্ডব’–এ রায়হান রাফি একদিকে যেমন তুলে ধরেছেন আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা, গুম-খুনের বাস্তবতা, তেমনি সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকারও চিত্রায়ণ করেছেন। জয়া আহসান সাংবাদিকের ভূমিকায় ছিলেন অসাধারণ। নায়িকা চরিত্রে সাবিলা নূরের অভিনয় মন্দ না হলেও তাঁর গেটআপ ও মেকআপ আরও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন ছিল।

ছবির অন্যান্য চরিত্রে আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজি সিদ্দিকী, আফরান নিশো এবং তারিক আনাম খান (স্বল্প উপস্থিতিতেও) দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তারকা সমৃদ্ধ এই সিনেমার গানগুলো ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এককথায়, ‘তাণ্ডব’ সময়োপযোগী, সাহসী ও চিন্তাকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো একটি সিনেমা। পরিচালক রায়হান রাফি এবং বায়স্কোপ ফিল্মসকে ধন্যবাদ—এমন একটি ছবি দর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন