শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

শিরোনাম

৬০ বা ১২০ সেকেন্ডে ঘুমিয়ে পড়ার উপায়

শনিবার, জুন ২৮, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ফিচার ডেস্ক: সত্য বলুন তো, রাতে যতটা সময় ঘুমান, তার চেয়ে বেশি সময় কি ঘুমানোর চেষ্টাতেই কেটে যায়? তাহলে এ সমস্যায় শুধু আপনিই ভুগছেন না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি তিনজনে একজন এমন ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। যদিও বলা হয়, কোনো ব্যক্তির দিনে সাত-আট ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের প্রয়োজন। শিশুদের জন্য সেটা আরও বেশি। তবে আসলে কতটুকু ঘুমের প্রয়োজন, তা কোনো ব্যক্তির বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপরও নির্ভর করে—বলেন বিশেষজ্ঞরা।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় অনেকের। যেমন—

» দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি, অস্থিরতা বা বিরক্তি।

» কর্মক্ষমতা, একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তি কমা।

» বিষণ্নতা ও উদ্বেগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।

» হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতার ঝুঁকি বাড়া।

» আবার প্রতিনিয়ত ঘুমানোর জন্য দীর্ঘ সময় চেষ্টা করলে উদ্বেগ বাড়তে পারে। ফলে ঘুমের আবেশ ব্যাহত হতে পারে। যদি মস্তিষ্কে ঘুমের সংকেত না আসে, তাহলে শরীরের জন্যও ঘুমের প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

ঘুমানোর আগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

» ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

» ঘরের পরিবেশ ঘুমের উপযোগী করা।

» দিনের বেলার কাজ রাতে ঘুমে কতটা সহায়ক, তা বিশ্লেষণ করা।

» রাতে কীভাবে তাৎক্ষণিকভাবে ঘুমিয়ে পড়া যায়, তা নিয়ে সচেতন থাকা।

এরপরও ঘুমাতে সমস্যা হলে পদ্ধতি বদলে কয়েকটি পদ্ধতি কাজে লাগান।

সামরিক পদ্ধতি

আমেরিকান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড কোচ লয়েড বাড উইন্টার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি শিথিলকরণ কৌশল তৈরি করেছিলেন। মনে করা হয়, মার্কিন নৌবাহিনীর প্রি-ফ্লাইট স্কুলের বিমানচালকদের ১২০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করেছিল সে কৌশল।

উইন্টারের ‘রিলাক্স অ্যান্ড উইন: চ্যাম্পিয়নশিপ পারফরম্যান্স’ (১৯৮১) বই থেকে জানা যায়, এ পদ্ধতি অনুসরণের ফলে কফি পানের পরেও এবং তাঁদের চারপাশে বন্দুকের গুলি চলার পরেও ভালো ঘুমাতে পারার সাফল্যের হার ছিল প্রায় ৯৬ শতাংশ।

এই ঘুমের পদ্ধতিটি সম্পন্ন হতে পুরো ১২০ সেকেন্ড সময় নেয়। কিন্তু শেষ ১০ সেকেন্ডেই শেষ পর্যন্ত ঘুম আসে।

১২০ সেকেন্ডের সামরিক পদ্ধতিতে যেভাবে ঘুমাতে যাবেন

» মুখের ভেতরের পেশিসহ পুরো মুখ শিথিল করুন।

» কাঁধ ছেড়ে দিন। পেশি শক্ত না করে হাত দুটো শরীরের দুই পাশে নামান।

» বুক শিথিল করে শ্বাস ছাড়ুন। পা, ঊরু শিথিল করুন।

» একটি আরামদায়ক দৃশ্য কল্পনা করুন ১০ সেকেন্ডের জন্য। এপর আপনার মন থেকে নেতিবাচক চিন্তা দূর করার চেষ্টা করুন।

» এটি কাজ না করলে ১০ সেকেন্ডের জন্য বারবার নিজেকে ‘চিন্তা করো না’ বলার চেষ্টা করুন।

» পরের ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুম চলে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

» এটিও যদি কাজ না করে, তাহলে আপনাকে সামরিক পদ্ধতির ভিত্তিগুলোর ওপর কাজ করতে হতে পারে। যেমন—শ্বাসপ্রশ্বাস এবং পেশি শিথিলকরণ। এ ছাড়া কিছু অবস্থা; যেমন—মনোযোগে ঘাটতি, হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার এই পদ্ধতির কার্যকারিতায় বাধা দিতে পারে।

৬০ সেকেন্ডে ঘুমিয়ে পড়তে চাইলে

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাস, ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি এবং শিথিলকরণ পদ্ধতিগুলো অনিদ্রার চিকিৎসায় কার্যকর।

দুটি পদ্ধতি শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারে। পেশি শিথিল করে মন শান্ত রাখতে সহায়ক পদ্ধতিগুলো হলো—

৪-৭-৮ শ্বাস-প্রশ্বাস পদ্ধতি

এই শ্বাস-প্রশ্বাস পদ্ধতিটি প্রাণায়াম ব্যায়ামের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই ধ্যান ও ভিজ্যুয়ালাইজেশন কৌশলটি যত বেশি অনুশীলন করবেন, এটি ঘুমিয়ে পড়তে তত বেশি কার্যকর হতে পারে। আপনার হাঁপানি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থাকলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রস্তুতির জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ মুখের তালুর বিপরীতে, সামনের দুটি দাঁতের পেছনে রাখুন। জিহ্বা পুরো সময় সেখানে রাখুন।

৪-৭-৮ শ্বাস-প্রশ্বাসের চক্র কীভাবে করবেন

» দুই ঠোঁটের মাঝখানে সামান্য ফাঁক রাখুন। মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময় একটি হুশিং শব্দ করুন।

» এবার ঠোঁট বন্ধ করুন এবং নাক দিয়ে চুপচাপ শ্বাস নিন। মনে মনে চার পর্যন্ত গণনা করুন।

» সাত সেকেন্ডের জন্য শ্বাস ধরে রাখুন। এটি অনুশীলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

» আট সেকেন্ড ধরে ধীরে ধীরে হুশিং শব্দসহ শ্বাস ছাড়ুন।

» আপনি যখন আবার শ্বাস নেন, তখন একটি নতুন চক্র শুরু হবে। চারটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করুন। তবে যদি আপনি আগে শিথিলতা অনুভব করেন তবে আপনার শরীরকে ঘুমাতে দিন। পরদিন সকালে উঠুন পরিতৃপ্ত মনে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন