রবিবার, ০৩ আগষ্ট ২০২৫

শিরোনাম

কিভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন ? জেনে নিন ৬ উপায়

শনিবার, আগস্ট ২, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
ক্যান্সার

ক্যান্সার একটি জটিল রোগ, যা সাধারণত আমাদের শরীরের কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি থেকে শুরু হয়। এই অস্বাভাবিক কোষগুলি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। যদিও আজকের আধুনিক চিকিৎসায় অনেক ধরণের ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাময় করা খুবই কঠিন। তাই ক্যান্সার থেকে দূরে থাকার জন্য সঠিক জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অপরিহার্য। আমেরিকার জীববিজ্ঞান, জেনেটিক্স ও জৈব রসায়নের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টমাস এন. সেইফ্রিড দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন, যেগুলো মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। চলুন, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক

ক্যান্সার প্রতিরোধে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত

রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা শরীরে ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়, যা ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের আগ্রাসন বাড়াতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং সাদা রুটি বা ফাস্ট ফুড যেগুলো দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, সেগুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর, কম চিনিযুক্ত খাবার বেছে নিন। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমান

কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমান

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, অধিক পরিমাণে সাদা ভাত, সাদা রুটি এবং চিনিযুক্ত পানীয় খেলে শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিন কোষ বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে দেয়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। বাদাম, শাকসবজি, ফুলকপি, ব্রাউন রাইস এবং অন্যান্য সম্পূর্ণ শস্য জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত। এগুলো ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে নিয়মিত ব্যায়াম

ক্যান্সার প্রতিরোধে নিয়মিত ব্যায়াম

শরীর সচল রাখা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে অন্যতম উপায়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা কিংবা হালকা ব্যায়াম করা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শারীরিক কার্যকলাপ ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং প্রদাহ কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম অন্তত ১৩ ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, বিশেষ করে স্তন, কোলন ও জরায়ুর ক্যান্সার।

রোজা রাখুন

রোজা বা খাবার গ্রহণ থেকে বিরতি নেওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এটি শরীরের প্রাকৃতিক মেরামত প্রক্রিয়া সক্রিয় করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রোজার সময় শরীর ফ্যাট ও দূষিত পদার্থ কমাতে সক্ষম হয় এবং কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রোজা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

মানসিক চাপ কমান

দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ শরীরের হরমোন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং প্রদাহ বাড়ায়। এই অবস্থায় ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রকৃতিতে সময় কাটানো, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি করে মানসিক চাপ কমানো উচিত। শিথিল থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

প্রদাহ কমানোয় সাহায্যকারী খাবার খান

শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ থাকা ক্যান্সারের জন্য একটি বড় ঝুঁকি। তাই প্রদাহ কমানোর জন্য এমন খাবার খাওয়া দরকার যা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহ বিরোধী) গুণসম্পন্ন। এতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। উদাহরণস্বরূপ- টমেটো, লাল শসা, আলু, বাদাম, সয়াবিন, অলিভ অয়েল এবং সবুজ শাক-সবজি। এসব খাবার নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

চিকিৎসকের পরামর্শ

চিকিৎসকের পরামর্শ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাহনেওয়াজ মাহমুদ বলেন: “বর্তমানে আমরা যা খাই এবং যেমন জীবনযাপন করি, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরে। অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি কেবল বংশগত নয়, বরং পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা, সুষম খাবার, ঘুম ও চাপমুক্ত জীবন—এই চারটি বিষয় ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ মানুষ যদি বছরে অন্তত একবার রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন ও ফিজিক্যাল চেকআপ করান, তবে অনেক রোগ আগেই ধরা সম্ভব। ক্যান্সার একটি নীরব ঘাতক। তাই সচেতনতা আর প্রতিরোধই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।”

শেষ কথা

ক্যান্সার প্রতিরোধে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমানো, রোজা রাখা, চাপমুক্ত থাকা এবং প্রদাহ কমানো—এসব উপায় মেনে চললেই ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাই নিজের ও পরিবারের সুস্থতার জন্য এই ছয়টি অভ্যাস প্রতিদিনের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি। সুস্থ জীবন যাপনের মাধ্যমে আমরা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন