বৃহস্পতিবার, ০৭ আগষ্ট ২০২৫

শিরোনাম

লিভার সুস্থ রাখতে যা কিছু এড়িয়ে চলবেন

বুধবার, আগস্ট ৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
লিভার

লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। লিভার একে বলা হয় ‘সাইলেন্ট ওয়ার্কার’। কারণ, লিভার কোনও শব্দ ছাড়াই প্রতিনিয়ত কাজ করে চলে—রক্ত পরিশোধন, হজমে সহায়তা, ভিটামিন মজুত রাখা, টক্সিন বের করে দেওয়া, ওষুধ ভাঙানোসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এই অঙ্গটি।

লিভার এর আশঙ্কার বিষয় হলো, আমাদের প্রতিদিনের জীবনধারার কিছু সাধারণ অভ্যাসই ধীরে ধীরে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করছে—যার পরিণতিতে লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভার, এমনকি লিভার ক্যানসারের মতো জটিল রোগ দেখা দিতে পারে।

লিভার কী করে?

লিভার বা যকৃত আমাদের শরীরের পাওয়ার হাউস এবং প্রধান ফিল্টার। আপনি যখন খাবার খান, তখন তা লিভার দ্বারা উৎপাদিত বিভিন্ন এনজাইম, প্রোটিন এবং পিত্ত দ্বারা পাকস্থলী এবং অন্ত্রে ভেঙে যায়। এটি ভিটামিন, খনিজ এবং কার্বোহাইড্রেটের ভান্ডার হিসেবেও সঞ্চালিত হয়। লিভারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে: রোগ-প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করে, হরমোন যেমন অ্যাড্রেনালিন রিসাইকেল করে লিভার। এ ছাড়া শরীরের অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং আয়রন ও কপার জমা করে রাখার কাজ করে লিভার। বড় অরগান, বেশি কাজ, তাই চাহিদাও বেশি। দুই দিক থেকে রক্ত সরবরাহ করতে হয় লিভারের জন্য।

লিভার অসুখের জন্য আমাদের নানা ভুল অভ্যাস অনেকাংশে দায়ী। বিশেষ করে ভুল খাবার নির্বাচন ও সঠিক উপায়ে না খাওয়া এর মধ্যে অন্যতম। লিভার ভালো রাখতে বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, হাত না ধুয়ে খাওয়ার মতো অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিন।

লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

লিভার ভালো রাখতে যেসব জিনিস এড়িয়ে চলবেন

  • ড্রাই ক্লিনিংয়ে ব্যবহৃত দ্রাবক: ড্রাই-ক্লিন করা কাপড় পরিষ্কার লাগলেও, এতে ব্যবহৃত পারক্লোরোইথিলিন নামের দ্রাবকটি বিষাক্ত। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে লিভারের কোষ ধ্বংস করতে পারে।
  • কীটনাশক: ফল ও সবজিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করলে লিভার তা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে চাপে পড়ে। নিয়মিত এসব রাসায়নিক গ্রহণ করলে লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে।
  • কসমেটিক পণ্য: ফাউন্ডেশন, পারফিউম, চুলের রঙ, স্কিন ক্রিমে থাকা প্যারাবেন বা ফর্মালডিহাইড জাতীয় রাসায়নিক ত্বক থেকে শরীরে প্রবেশ করে লিভারের ওপর চাপ ফেলে।
  • অতিরিক্ত ওষুধ সেবন: বিশেষ করে ব্যথানাশক ও হরমোনজনিত ওষুধ বেশি খেলে লিভারে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও চর্বিযুক্ত খাবার: এগুলো লিভারে ফ্যাট জমিয়ে ফেলতে পারে, যার ফলে ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস এবং সিরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।

চিকিৎসকদের পরামর্শ:

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, “বেশিরভাগ মানুষ জানেই না—তাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্র ধীরে ধীরে লিভারের ক্ষতি করছে। অনেকে শুধু অ্যালকোহলকে দায়ী করেন, কিন্তু আজকাল প্রসাধনী, খাবারদাবার ও পরিবেশ দূষণের কারণেও লিভার আক্রান্ত হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “যেকোনো রাসায়নিক ব্যবহারের পর পরিশ্রুত পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নেওয়া, বাজার থেকে আনা ফলমূল ভালোভাবে ধোয়া, এবং সন্দেহজনক প্রসাধনী ও রাসায়নিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।”

সুস্থ লিভারের জন্য কিছু করণীয়:

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
  • ফল ও সবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT) বছরে একবার করে করিয়ে নিন।

পরিশেষে, লিভার এমন একটি অঙ্গ, যা নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যখন সমস্যা ধরা পড়ে, তখন অনেক সময়ই অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই সচেতন থাকুন, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলুন, এবং অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক বা অভ্যাস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন—এতেই আপনার লিভার থাকবে সুস্থ ও সবল।

যে খাবার এড়িয়ে চলবেন

লিভার সুস্থ রাখতে যে যে খাবার এড়িয়ে চলবেন

বাইরের ভাজাভুজি, তেল-মসলাদার, চপ-কাটলেটের মতো খাবারেও ভরপুর ফ্যাট থাকে। নিয়মিত এ ধরনের খাবার পেটে গেলেই ফ্যাটি লিভারসহ আরও নানা ধরনের লিভারের রোগ বাসা বাঁধে শরীরে।

কেক, পেস্ট্রি, কুকিজের মতো বেক করা খাবার লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভালো নয়। সকালের নাশতায় অনেকেই পাউরুটির সঙ্গে মাখন খান। চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের খাবারে ট্রান্স ফ্যাট থাকে যা নিয়মিত লিভারে গেলে ক্ষতি হতে পারে। তাই এসব ধরনের খাবার নিয়মিত না খেয়ে মাঝে মাঝে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো।

নিয়মিত মদপান লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। লিভার সুস্থ রাখতে তাই মদপান এড়িয়ে চলা একান্তই জরুরি। তবে সোডাযুক্ত পানীয়, নরম পানীয়ও কিন্তু লিভারের অসুখ ডেকে আনে। যারা মদপান করেন না, তারা এসব পানীয়তে চুমুক দেন। এতেও কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে লিভারের।

ময়দার রুটি, লুচি, পরোটা কিংবা রোল, চাউমিন- এই সব খেতে কমবেশি সবাই ভালোবাসেন। কিন্তু লিভারের জন্য এগুলি মোটেও ভালো নয়। ময়দার তৈরি কোনও খাবার বেশি খাওয়া ভালো নয়। ময়দা দিয়ে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবারও লিভারের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। তাই ময়দার তৈরি খাবার বেশি এবং রোজ না খাওয়াই ভালো।

মাত্রাতিরিক্ত হারে চিনি খাওয়ার অভ্যাসও লিভারের ক্ষতি করতে পারে। সরাসরি চিনি খাওয়া তো ক্ষতিকর বটেই। এ ছাড়াও চিনি আছে এমন কোনও খাবার, যেমন, মিষ্টি, ক্যান্ডি, চকোলেট নিয়মিত খেলে পরবর্তী কালে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নিয়মিত মদপান লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। লিভার সুস্থ রাখতে তাই মদপান এড়িয়ে চলা একান্তই জরুরি। তবে সোডাযুক্ত পানীয়, নরম পানীয়ও কিন্তু লিভারের অসুখ ডেকে আনে। যারা মদপান করেন না, তারা এসব পানীয়তে চুমুক দেন। এতেও কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে লিভারের।

নিয়মিত মদপান লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। লিভার সুস্থ রাখতে তাই মদপান এড়িয়ে চলা একান্তই জরুরি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন