শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

লাল শাপলায় রঙিন কানাইঘাটের “আন্দু লেক”

মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৬, ২০২১

প্রিন্ট করুন
লাল শাপলায় রঙিন কানাইঘাটের আন্দু লেক 1

রুমান হাফিজ:

একটা ছোট্ট নৌকায় বসে আছেন। ঢেউহীন স্বচ্ছ পানির বুকে লাল শাপলার দল ঠেলে এগিয়ে চলছেন আপনি। নৌকার গায়ে ছোট বড় মাছেদের ধাক্কা,দলবদ্ধ পাখিদের ওড়াউড়ি-কিচিরমিচির শব্দ আপনাকে হারিয়ে দেবে ভিন্ন জগতে। আর সেজন্য যেতে হবে সিলেটের ‘আন্দু লেকে’। সুরমা-লোভা বিধৌত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের কানাইঘাট। আর সেই সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে এই “আন্দু লেক”। যাকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্পের এক অপার সম্ভাবনা। লেকের চারপাশে সবুজ বৃক্ষে মোড়ানো গ্রাম। যেনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোন ছবির বাস্তব দৃশ্য। স্বচ্ছ জল, চারপাশ থেকে বয়ে আসা শীতল মৃদুমন্দ হাওয়ায় আন্দোলিত হবে যে কেউ।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নে অবস্থিত আন্দু লেকটি স্থানীয়দের কাছে “আন্দু নদী” নামেই বেশি পরিচিত। বৈশাখ কিংবা আষাঢ় মাস নয় সারাবছরই সমানভাবে পানিতে ভরপুর থাকে। কোনো নদীর সঙ্গে সংযোগ নেই বলে জোয়ার এবং স্রোত কিছুই নেই। তবে নদীটির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো এটি দেখতে ইংরেজি “U” বর্ণের মতো! উৎপত্তি উপজেলার ১ নং ইউপির ভাটি বারা পৈত গ্রাম হয়ে ৪ নং সাতবাঁক ইউপি আর ৩ নং দিঘির পার ইউপির কিছু গ্রাম ছুঁয়ে আবার সেই ভাটি বারা পৈত গ্রামে গিয়ে শেষ হয়েছে।

জানা যায়, লেকটি ১৯৪৭  সালের পূর্বে এটি সুরমা নদী ছিলো। প্রায় ৬ কিলোমিটারের লেকটি যেখানে শুরু হয়েছিল তার দেড় কিলোমিটার বিপরীতে গিয়ে শেষ হয়েছে। বৃটিশ সরকার এই  এলাকাকে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং নদীর গতিপথ সোজা করার জন্য লেকটির দু পাশে মাটি ভরাট করে  সুরমা নদী থেকে এঅংশ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এর পর  থেকে যার নাম হয় পুরাতন সুরমা বা আন্দু গাঙ্গ।

শীত মৌসুমে অনেক প্রকার দেশী ও অতিথি পাখির দেখাও মেলে এই লেকে। স্বচ্ছ জলে লাল- সাদা দুই রঙের শাপলা ফুটে, যার সৌন্দর্য অন্যান্য হাওরকে হার মানায়। আন্দুর চান্দু,গজার,শোল ও বোয়ালসহ শত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় লেকে। সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকনের জন্য আন্দু লেক অন্যতম উপযোগী স্থান।

আন্দু লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন অসংখ্য পর্যটক। পার্শ্ববর্তী জকিগঞ্জ উপজেলা রাহুল আহমেদ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললেন, বাড়ির কাছে এতো সুন্দর জায়গা এটা আগে জানা ছিলো না। এবার খোঁজ পাওয়ার পরেই আর দেরি করি নি। সবাই মিলে চলে আসলাম। সত্যি বলতে অনেক বেশি ভালো লাগছে। চারদিকে সবুজ গ্রাম আর লেকের শাপলা যেনো হারিয়ে দিলো প্রকৃতির সঙ্গে। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো হওয়ায় আসতে অসুবিধা হয় নি। আশাকরি সবাই আসবেন দেখতে।

সংরক্ষিত এই লেকটিকে  টুরিজম হিসেবে গড়ে তুলতে দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন  এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগ বেশি জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় লন্তিরমাটি গ্রামের বাসিন্দা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক শিপুল আমিন চৌধুরী।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিনহাজ ইবনে এবাদ জানান, আমরা ছোটবেলা থেকে এই নদীটি যেভাবে দেখেছি এখনো ঠিক তাই আছে। নদী উপকারের সঙ্গে অপকার করে অনেক জায়গায়, কিন্তু আন্দু নদী এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আন্দু নদীর ফল ভোগ করছেন এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। এই নদীর মাছগুলো খুবই মজাদার। এখান থেকে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব পাচ্ছে, এর উপযুক্ত মূল্যায়ন ব্যতিক্রমী সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।

যেভাবে যাওয়া যাবে আন্দু লেকে:

সিলেট থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সিলেট জকিগঞ্জ রোডের বাংলা বাজার নামক স্থানে নেমে জনপ্রতি ১০টাকা ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা করে ভবানিগঞ্জ বাজার যেতে হবে,ভবানিগঞ্জ বাজারের ঘেঁষেই আন্দু লেক।এছাড়াও সিলেট জকিগঞ্জ রোডে সড়কের বাজার নেমে ১০টাকা ভাড়ায় লেগুনা বা সিএনজি অটোরিকশা ধরে লন্তির মাটি স্ট্যান্ডে যেতে হবে,স্ট্যান্ডের পাশেই আন্দু লেক।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন