নিমপাতা রূপচর্চায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান। নিমপাতা ভারতীয় উপমহাদেশে শত শত বছর ধরে নিম ব্যবহার হয়ে আসছে ত্বক ও চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে। আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় নিমের গুরুত্ব অপরিসীম। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, নিমপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, যা ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, ব্রণ দূর করে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং প্রদাহ কমায়।
বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে ত্বকে ফুসকুড়ি, ব্রণ, চুলকানি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন কিংবা অতিরিক্ত তেলতেলেভাবের সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিমপাতাকে রূপচর্চার রুটিনে যুক্ত করতে পারেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক,

ত্বকের যত্নে নিমপাতার কিছু কার্যকরী ব্যবহার
ত্বককে সুস্থ রাখতে নিমপাতা
নিমে থাকা প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক উপাদান ত্বকের গভীর থেকে ময়লা, ধুলো ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে। কয়েকটি তাজা নিমপাতা সেদ্ধ করে পানি ছেঁকে নিন এবং সেই পানি গোসলের পানিতে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন বা অন্তত সপ্তাহে ৩ দিন এই পানি দিয়ে গোসল করলে চুলকানি, র্যাশ, ফাঙ্গাল সংক্রমণ, একজিমা ইত্যাদি সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যায়। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় গায়ের দুর্গন্ধ প্রতিরোধেও এটি উপকারী।

ব্রণ দূর করতে নিমপাতার ব্যবহার
ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ব্রণ হয়। কয়েকটি নিমপাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে আধা ঘণ্টা পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে প্রদাহ কমবে এবং নতুন ব্রণ ওঠা বন্ধ হবে।
ব্রণের দাগ হালকা করতে
নিমপাতা গুঁড়ার সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে পুরনো ব্রণের দাগ ফিকে হয়ে যাবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শশা ও নিমের ফেসপ্যাক বা নিম ও টকদইয়ের প্যাকও ভালো ফল দেয়।
প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে
নিমপাতা সেদ্ধ করে পানি ছেঁকে ঠান্ডা করুন এবং পরিষ্কার বোতলে ভরে রাখুন। প্রতিদিন রাতে মুখ ধোয়ার পর তুলায় ভিজিয়ে লাগান। এতে ত্বকের বলিরেখা, দাগ এবং কালচে ভাব কমে যায়, পোরস টাইট হয়।
রোদে পোড়া ভাব কমাতে
রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতে ১ চা চামচ নিমপাতা বাটা, ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, ১ চা চামচ মুলতানি মাটি ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সংবেদনশীল ত্বক হলে লেবুর রস বাদ দিন।

ব্ল্যাকহেড ও হোয়াইটহেড কমাতে
১ চা চামচ নিমপাতা গুঁড়া, ১ চা চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়া, অল্প মধু, দুধ ও টকদই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করলে ব্ল্যাকহেড ও হোয়াইটহেড দূর হয় এবং ত্বক মসৃণ হয়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে
নিমপাতা গুঁড়ার সঙ্গে দুধ ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখ ও গলায় লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
অতিরিক্ত উপকারিতা
- চুলের খুশকি ও চুলকানি কমাতে নিমপাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে মাথা ধুতে পারেন।
- হাত ও পায়ের ফাঙ্গাল সংক্রমণ কমাতে নিমপাতার পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগান।
- নখের সংক্রমণ ও ইনগ্রোন নখের প্রদাহ কমাতেও কার্যকর।
অতিরিক্ত নিম ব্যবহার করলে শুষ্ক ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
লেবুর রস মেশানো প্যাক লাগানোর পর অন্তত ৮ ঘণ্টা রোদে যাবেন না, ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা নিম সেবন বা অতিরিক্ত ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
নিমপাতা সাশ্রয়ী, সহজলভ্য এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি প্রাকৃতিক উপাদান। নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার ও সুস্থ রাখে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং নানা সমস্যা দূর করে।
উজ্জ্বলতা আনতে
নিমপাতা গুঁড়ার সঙ্গে তরল দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে দিন। মুখ ও ঘাড়ে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। এছাড়া নিম পাতার গুঁড়া, হলুদ, মধু, গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
নিমপাতা সাশ্রয়ী, সহজলভ্য এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি প্রাকৃতিক উপাদান। নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার ও সুস্থ রাখে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং নানা সমস্যা দূর করে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন