সিলেট প্রতিবেদক:
সিলেটের ঐতিহ্যের স্মারক আলী আমজাদের ঘড়ি। ১৮৭৪ সাল থেকে সিলেট নগরের কিন ব্রিজের উত্তর অংশের প্রবেশমুখে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই ঘড়িটি। এক ঘণ্টা পরপরই ঘণ্টা বাজিয়ে নগরবাসীকে সময় জানান দিচ্ছে ঘড়িটি। সববয়সী মানুষের কাছে পরিচিত এই ঘড়িটি দেখতে অনেক পর্যটকও আসেন।
জানা গেছে, ১৮৭৪ সালে তৎকালীন বড় লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেট সফরে এসেছিলেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওই বছর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজাদ খানের নামে। সেই থেকে এটি আলী আমজাদের ঘড়ি নামে পরিচিত।
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ভারতের দিল্লির চাঁদনী চক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নবাব ঘড়িটি স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাদের মতে, সেই সময়ে সিলেটে ঘড়ির প্রচলন তেমন ছিল না। ফলে এ ঘড়ি থেকেই সময় জানতে পারত শহরের বেশির ভাগ মানুষ।
কিন ব্রিজ এলাকায় আলী আমজাদের ঘড়িঘরের পাশে গিয়ে দেখা যায়, এক ঘণ্টা পর পর ঘণ্টা বাজিয়ে নগরবাসীকে সময় জানান দিচ্ছে ঘড়িটি। তবে ঘড়িঘরের সামনে এবড়োথেবড়োভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গাড়ি। এতে করে একদিকে যেমন ঐতিহ্যের স্মারক ঘড়িটি ঢাকা পড়ছে অন্যদিকে ওই এলাকার সৌন্দর্যও বিনষ্ট হচ্ছে।
ঘড়িটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আলী আমজাদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট, ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা ৭ ফুট, ঘড়ির ওপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। মোট উচ্চতা ২৬ ফুট। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা ২ ফুট লম্বা। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতি তৈরি করা হয়েছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা ঘড়িটি বিধ্বস্ত করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু সংখ্যক প্রবাসী, এরপর তৎকালীন সিলেট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটি সচল করতে উদ্যোগী হয়। এরপর থেকে ঘড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী বলেন, আলী আমজাদের ঘড়ি সিলেটবাসীর কাছে এখন ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপনা। দূরদুরান্ত থেকে পর্যটকরাও বিশাল এ ঘড়ি দেখতে আসেন। এর নান্দনিক স্থাপনা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন ওই ঘড়িঘরের সামনে এবড়োথেবড়োভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গাড়ি। এতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিনষ্ট হচ্ছে এর সৌন্দর্য।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ঘড়িটি বর্তমানে সচল আছে। ২০১৬ সালে দুই লাখ টাকা ব্যয় করে ঘড়িটি মেরামত করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত ঘড়িঘরের দেখভাল করছি।
ঘড়িঘরের সামনে সিটি করপোরেশনের গাড়ি রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের জায়গা সংকট, যে কারণে গাড়িগুলো এখানে রাখা হচ্ছে। তবে শিগগিরই আমাদের গ্যারেজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে যাবে। গ্যারেজ হয়ে গেলেই গাড়িগুলো সরানো হবে।
আরএইচ/
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন