ইফতেখার ইসলাম:
দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় আধিপত্য বিস্তার করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তাদের রাজনৈতিক কূটকৌশলের কাছে বার বার পরাস্ত হয়ে প্রায় যায় যায় অবস্থা এক সময়ের ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির।
তবে সাম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালাদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোকে কেন্দ্র করে। বিএনপি সরব হয়েছে মাঠের আন্দোলনে। বিবৃতি দিয়েও অনেক নেতা-কর্মী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনে অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেই সাথে দেশে দেশে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের সাথে কর্মসূচীতে নতুন যুক্ত হয়েছে অনশন ।
শনিবার( ২০ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে ঢাকার নয়াপল্টনে নেতা-কর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অনশন কর্মসূচী শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীরা।
লিভারের সমস্যায় ভুগছেন খালেদা জিয়া:
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হার্ট, কিডনিসহ অনেক শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তবে তিনি এখন লিভারের সমস্যায় বেশি ভুগছেন। এ ছাড়া তাঁর ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত। হিমোগ্লোবিনের সংকট রয়েছে। রক্তচাপও ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত এপ্রিলে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। করোনা থেকে সেরে উঠলেও নানা জটিলতায় তাঁকে দুই দফা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন খালেদা জিয়া। দ্রুত বিদেশে তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি:
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। এমন বাস্তবতায় দলের নেতা-কর্মীরা দলীয় নেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের (সরকারের) লক্ষ্য একটাই। তারা খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে এখন জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, চক্রান্ত করছে। সে কারণে তারা তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগটাও দিতে চাইছে না। এটা এক করুণ নির্মমতা। মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে তারা রাজনীতি করছে। বাংলাদেশর মানুষ এসব মেনে নেবে না।
এইদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে যাওয়া জরুরি। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দিয়ে অমানবিক কোনো পথে পা বাড়ালে মানুষ রাস্তায় নামবে। সরকারের নির্দয়-নির্মমতার উপযুক্ত জবাব দেবে।
যা বলছে আওয়ামীলীগ নেতারা:
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার জন্য আমি আমার নির্বাহী ক্ষমতা বলে যা করতে পারি তাই করেছি, আইন পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।’ ‘আমরা অমানুষ না। অমানুষ না বলেই তাকে অন্তত তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু, নির্বাহী ক্ষমতা আমার হাতে যতটুকু আছে, আমি সেটুকু দিয়ে তাকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’
জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করার পরও তার সরকার খালেদা জিয়াকে মানবতা দেখিয়েছে অভিমত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা, মা, ভাই এমনকি ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপরও তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। কারণ আমরা অমানুষ নই।’
অনেকের মনে আছে হয়তো, খালেদা জিয়া এর আগেও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিনব্যাপী তিনি পায়ের রোগে, চোখের রোগে ভুগছিলেন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি যখন চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান তখন কিন্তু তিনি সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন না, অভিযুক্ত ছিলেন। এখন তার শারীরিক পরিস্থিতি আরও জটিল।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন , “বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেই মহানুভবতা দেখিয়েছেন তা নজিরবিহীন। সেটি আমি ব্যক্তি হিসেবে কখনো দেখাতে পারতামনা, অন্য কেউও পারতোনা। বেগম খালেদা জিয়া নিজেও পারতেন কিনা সেই প্রশ্নটাও করা উচিৎ।”
আইনের ফাঁক ফোকর:
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়াকে দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই।
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী বলেছেন এখানে কোনো আইনেই সুযোগ নেই তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠানোর। এটা ডাহা মিথ্যা কথা।
‘আইনে সুযোগ রয়েছে। ওই যে তারা আইনের কথা বলছেন ৪০১, সেই ৪০১-এর মধ্যেই বলা আছে সম্পূর্ণ এখতিয়ারটা সরকারের। সরকার চাইলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে। সরকার চাইলে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পারে’-যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া দুই মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া কারাগার থেকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান৷ নির্বাহী আদেশে তার দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়৷ এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করে করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ সর্বশেষ ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়ার পুত্রবধু শর্মিলা রহমান খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আবেদন করেন ৷ এর আগে ৬ মে বিদেশে পাঠানোর আবেদন করা হলেও তা নাকচ হয়৷
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন