ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, অপরাধী ইসরাইলি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পথ বন্ধ নয়। সেই সঙ্গে তিনি ইসলামী দেশগুলোকে ইসরাইলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) তেহরানের ইমাম খোমেনি হোসেইনিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান খামেনি।
তিনি বলেন, ঘৃণিত জায়নিস্ট শাসনব্যবস্থা ভয়াবহ অপরাধ ও বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অপরাধ যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তির সহায়তায় সংঘটিত হলেও প্রতিরোধের পথ বন্ধ নয়। আজকের দিনে বিরোধী দেশগুলো- বিশেষ করে ইসলামী দেশগুলো; অবশ্যই এ শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তাদের রাজনৈতিক সম্পর্কও বাদ দিয়ে এ শাসনকে আরও একঘরে করতে হবে।
খামেনি আরও বলেন, জায়নিস্ট শাসন বিশ্বের সবচেয়ে একঘরে ও ঘৃণিত শাসনব্যবস্থা। ইরানের কূটনীতির অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত অন্য সরকারগুলোকে প্রথমে বাণিজ্যিক এবং দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো।
তিনি ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষত ‘আরোপিত ১২ দিনের যুদ্ধ’-এর সময় ত্যাগী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, প্রেসিডেন্টের প্রেরণা, স্পৃহা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।
চীনে প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক সফরের প্রসঙ্গ টেনে খামেনি বলেন, এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
অর্থনীতি ও জনজীবনে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়ে খামেনি বলেন, এ বিষয়ে বাইরের পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে উদ্যম, আশা ও পরিশ্রমের মনোভাব নিয়েই কাজ করতে হবে, যাতে শত্রু আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাওয়া ‘না যুদ্ধ, না শান্তি’ পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করা যায়।
তিনি জাতীয় শক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধিকে সরকারের প্রধান দায়িত্ব আখ্যা দিয়ে বলেন, জাতির মনোবল, প্রেরণা, ঐক্য ও আশা- এসবকে ভাষণ ও কর্মের মাধ্যমে জোরদার করতে হবে এবং কোনোভাবেই দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
খামেনি বলেন, ইসলামী শিক্ষা, লক্ষ্য ও আইন বাস্তবায়নই ইরানি ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এ বিষয়ে ইমাম খোমেনি শুরু থেকেই জোর দিয়েছেন।
দেশের ভেতরে ঐকমত্য সৃষ্টির সম্ভাবনায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের প্রধানদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা প্রশংসনীয়। তবে নীতি প্রণয়নকারী অন্যান্য সংস্থাকেও এতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে হবে।
জনজীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ টেনে খামেনি বলেন, এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে জনগণ প্রায় দশটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা ছাড়াই নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।
তেল উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রচলিত ও পুরোনো প্রযুক্তি বদলে তরুণ স্নাতকদের জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে। তেল উৎপাদন ও উত্তোলনে রূপান্তর আনতে হবে। পাশাপাশি তেল রপ্তানির ক্ষেত্রেও গ্রাহকভিত্তি বাড়াতে হবে।
বৈঠকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সরকারের এক বছরের কর্মকাণ্ডের রিপোর্ট তুলে ধরেন। তিনি জানান, রাশিয়া, চীন, ইরাক, তুরস্ক ও ইউরেশীয় দেশগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হয়েছে এবং উভয় পক্ষই কাগজে-কলমে হওয়া এসব চুক্তি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে করিডর, বন্দর ও মহাসড়কগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। এ বছরের মধ্যেই জাহেদান-চাবাহার রেলপথ নির্মাণ শেষ করার পরিকল্পনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান জানান, সাম্প্রতিক আরোপিত যুদ্ধে পণ্য পরিবহনে ট্রাক চালকদের ব্যাপক তৎপরতা ছিল একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন