মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা সরব কংগ্রেসম্যানরাও

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৫, ২০২১

প্রিন্ট করুন
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা সরব কংগ্রেসম্যানরাও 1

ওয়াশিংটন ডিসি: বাংলাদেশ হিন্দু নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে সারা পৃথিবীর হিন্দুরা প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেছে। সম্প্রতি হিন্দু নির্যাতন, নারী ও শিশু ধর্ষণ, হত্যা, মূর্তি ও মন্দির ভাঙ্গা, ঘর বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তি লুটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা-সমাবেশে উত্তাল হচ্ছে আমেরিকা। বাংলাদেশী হিন্দুস ইন ইউএসএ, হরি চাঁদ গুরু চাঁদা আন্তর্জাতিক মতুয়া মিশন ইনক, মহিলা হিন্দু সংগঠনসহ একাধিক ব্যানারে ইতিমধ্যে আমেরিকার বিভিন্ন সিটির প্রায় ১১-১২টি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

এ চলমান প্রতিবাদের অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে নিউইয়র্কের ৩০টির বেশি হিন্দু ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেয়। এ সব কর্মসূচিতে হিন্দু কমিউনিটির নেতারা বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অন্য দিকে, প্রতিবাদে সরব হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরাও। এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক কনগ্রেসম্যান।

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন আমেরিকাবাসী বাংলাদেশী হিন্দুরা। সমাবেশে কমিউনিটির নেতাদের মাধ্যমে স্টেইট ডিপার্টমেন্ট, হোয়াইট হাউজ, ইন্ডিয়ান এম্বেসি, বাংলাদেশ এম্বেসিসহ একাধিক বিদেশী দুতাবাসে স্মারকলিপি, চলমান দাঙ্গা, হত্যা ও হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবেদন পাঠানো হয়। হিন্দু কমিউনিটির নেতা প্রানেশ হালদার, শুভ রায়, বিদুৎ সরকার, প্রবীর রয়, প্রিয়তোষ দে, সুশীল সিনহা, প্রকাশ গুপ্ত, তপু সরকার, সমর রায়, সঞ্জীত ঘোষ, প্রবীর রায়, শ্রী নাথ, ভবতোষ মিত্র, প্রভু নিত্যানন্দ দাস, প্রদীপ মালাকার, প্রদীপ কুন্ডু, আশীষ ভৌমিক, কুমার বনিক, রুপ কুমার ভৌমিক, সুশীল সাহা, সমীর সরকার, আনুকূল আধিকারি, অরবিন্দ বিশ্বাস, নীহার সরকার, রাম দাস ঘরামি, দিলীপ চক্রবর্তী, কুমার বাবুল সাহা, বিষ্ণু গোপ, রনি সরকার, নাবিন্দু দত্ত, সীতাংসু গুহ, দেওজীন ভট্টচার্য এ বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন ।

সমাবেশে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কামনা করে বিদুৎ সরকার বলেন, ‘গত ৫০ বছরে হিন্দু নির্যাতনের বিচার না হওয়ার কারণে মৌলবাদীদের উত্থান বেড়ে গেছে।’

সুশীল সিংহা নির্যাতনের শিকার সবাইকে ক্ষতিপুরণ দেয়ার দাবি জানান।

কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট ও শিক্ষানুরাগী দিলীপ নাথ বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, রাষ্ট্র ধর্মে বিশ্বাস করি না।’ তিনি বাংলাদেশে ৭২ এর সংবিধান চালু করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। একই সাথে হিন্দু শিশুদের গণধর্ষণ, হিন্দু হত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অপরাধীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দাবি করেন।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এর আগে গত ২৩ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিপার্টমেন্ট অফিস ভবনের সামনে সভা হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে টাইম স্কায়ার, জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকাতেও।

এ দিকে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর চাক শুমার, সিনেটর টিম কেন, কনগ্রেসম্যান ও ফরেইন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান গ্রিগরি মিকস, কনগ্রেসম্যান টম ‍সুহজি, কনগ্রেস ওমেন ক্যারোলিন ম্যালোনি, গ্রে মেনঙ, ভেট ক্লার্ক, কনগ্রেসম্যান রো কান্না, রাজা কৃষ্ণমূর্তি প্রমুখ।

এছাড়া নিউইয়র্ক রাজ্যের অনেক আইনপ্রণেতাও হিন্দুদের উপর সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা হলেন এসেম্বলিওমেন জেনিফার রাজকুমার, সিনেটর জেসিকা র‌্যামোস, সিনেটর লিওরি কমরি সিনেটর জন লিউ, সিনেটর রোজাক্সিন পারুয়েদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দু নিধন, হিন্দু নারী ও শিশুদের ধর্ষণ, হিন্দু কিশোরীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে, হিন্দুদের সহায় সম্পত্তি ধখল, ঘর বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দখল ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের দেশ ত্যাগে ব্যাধ্য করা বিরামহীনভাবে চলে আসছে। ফলে  হিন্দু জনসংখ্যা স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ২৮ শতাংশ থকে বর্তমানে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। গত ৫০ বছরে দেশে ৭৫ লাখ হিন্দু কমেছে। সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় নোয়াখালীতে কুরআন অবমাননার মিথ্যা অজুহাতে পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা হয়। নোয়াখালীতে পুরিহিতসহ সাতজন হিন্দুকে খুন করাসহ মন্দির ও মূর্তি ভাংচুর, বসতবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। এ ধ্বংস কার্যক্রম পরবর্তী দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে এ বিষয়ে রেজুলেশন উত্থাপিত হয়। সে ধারাবাহিকতায় আমেরিকার নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন রাজ্যের হিন্দুরা প্রতিবাদে সামিল হয়েছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন