সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

স্তন ক্যান্সার সচেতনতা: আগেভাগে জানুন, নিজেকে বাঁচান

সোমবার, অক্টোবর ৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

শাহাবুদ্দিন শুভ

অক্টোবর মাস বিশ্বজুড়ে পালিত হয় স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে। এটি এমন একটি সময়, যখন আমরা সবাই একসঙ্গে নারীর স্বাস্থ্য, আত্মরক্ষা ও জীবনের প্রতি সচেতনতা ছড়িয়ে দিই। কারণ, স্তন ক্যান্সার শুধু একটি রোগ নয়— এটি অনেক সময় একটি পরিবারের পুরো কাঠামো নড়িয়ে দেওয়ার মতো বাস্তবতা।

গত পাঁচ বছর ধরে আমি ‘ডক্টরস অ্যান্ড মেডিসিন’ প্ল্যাটফর্মে ধারাবাহিকভাবে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা করেছি। লিখেছি নানা সময়, সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী। তবে এ বছর আমার অভিজ্ঞতা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে— আমি এখন যে শহরে থাকি, সেই ফ্রান্সের ল্য ক্রুসো (Le Creusot) শহরে অক্টোবরে ‘পিঙ্ক অক্টোবর’-এর অংশ হিসেবে যে ব্যাপক সচেতনতা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক।

অনিশ্চিত আবহাওয়া সত্ত্বেও, রোববার সকালে শহরের এসপ্লানেড ডুশেন (Esplanade Duchêne) প্রাঙ্গণে প্রায় ৮০০ জনের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এক দৌড় ও পদযাত্রায়। আয়োজক সংস্থা ‘এন্তন্ত আথলেতিক দ্য ক্রুসো’ (Entente Athlétique du Creusot) এবং শহরের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ‘লা ক্রুসোতিন’ (La Creusotine) নামে এই দাতব্য দৌড়টি আয়োজন করা হয়। ‘পিঙ্ক অক্টোবর’-এর অংশ হিসেবে আয়োজিত এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই ও স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

সকালের শুরু হয় এক উদ্দীপনামূলক ওয়ার্ম-আপ পর্ব দিয়ে, যা পরিচালনা করেন স্পোর্টোনিকের অ্যাসেনসিওন গার্সিয়া। এরপর অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের গতিতে ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার হাঁটেন ভেরেরি পার্কের নির্ধারিত পথে। অবাক করার বিষয় হলো, এই আয়োজনে এক হাজারের বেশি ‘পিঙ্ক টি-শার্ট’ বিক্রি হয়, যার আয় ব্যয় করা হয় ক্যান্সার প্রতিরোধমূলক উদ্যোগে।

আমি মনে করি, আমরা যদি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই ধরনের আয়োজন চালু করতে পারতাম, তাহলে আমাদের দেশেও নারীরা আরও সচেতন হতে পারতেন। সচেতনতা বাড়লে সময়মতো রোগ শনাক্ত করা সম্ভব, আর তাতেই রক্ষা পেতে পারে হাজারো জীবন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে লক্ষাধিক নারী মারা যান শুধুমাত্র দেরিতে রোগ শনাক্ত হওয়ার কারণে। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।

তবু আজও অনেক নারী লজ্জা, ভয় বা অজ্ঞতার কারণে নিজের শরীর নিয়ে সচেতন নন। কিন্তু স্তনে ছোট্ট একটি গুটি, ব্যথা, নিপল থেকে অস্বাভাবিক তরল নির্গমন কিংবা আকারে পরিবর্তন— এসবই হতে পারে প্রাথমিক সতর্কসংকেত। তাই মাসিক শেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা (Self-Examination) করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সচেতনতার পাঁচটি সহজ পদক্ষেপ

১. নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা করুন।
২. ৪০ বছর বয়সের পর প্রতি বছর একবার ম্যামোগ্রাফি করুন।
৩. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
৫. নিয়মিত ব্যায়াম করুন— এটি শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

পরিবার ও সমাজকেও নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। লজ্জা নয়, আলোচনা ও তথ্যই পারে জীবন বাঁচাতে। আজকের একটি সচেতনতা আগামী দিনের একটি জীবন বাঁচাতে পারে।

চলুন, আমরা সবাই বলি— ‘নিজেকে জানুন, নিজেকে ভালোবাসুন, নিয়মিত পরীক্ষা করুন।’

একটি পরীক্ষা, একটি উদ্যোগ, একটি সচেতনতা— বাঁচাতে পারে একটি জীবন, একটি পরিবার, একটি ভবিষ্যৎ।

লেখক: সিইও, ডক্টরস অ্যান্ড মেডিসিন

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন