সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

আয়নাঘর মিথ্যা ও শেখ হাসিনার গুণকীর্তন গেয়ে কলাম, সেই শিক্ষক পেলেন পিএইচডি ছুটি

রবিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দুই শতাধিক কলাম লিখেছেন আওয়ামী লীগের শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের সক্রিয় সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মো. জাকির হোসাইন।এবার তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা ছুটির নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পিএইচডি ছুটির অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক পিএইচডি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কম পক্ষে দশ বছর সার্ভিস প্রদান করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। কিন্তু আইন অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক জাকির হোসাইনের চাকুরির মেয়াদ রয়েছে সর্বসাকুল্যে ৬ বছর। এমতাবস্থায় তার পক্ষে পিএইচডি ছুটি শেষ করে এসে বিশ্ববিদ্যালয়কে দশ বছর সার্ভিস দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এত কিছু জানার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার পিএইচডি ছুটি মঞ্জুর করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, তার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ থাকার পরেও কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিভাবে বিদেশ পালিয়ে যেতে অনুমতি প্রদান করে সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। এটি জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে ধৃষ্টতার সমান। খুব শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবো।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ বিরোধীতা করায় আইন অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে অধ্যাপক জাকির আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতো, বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখতো। আওয়ামী লীগের ম্যান্ডেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যদে নির্বাচন করেছেন। আয়নাঘরের মতো স্পষ্ট ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বাজে ও মিথ্যা কলাম লিখেছেন তিনি। জুলাই পরবর্তী সময়ে অনেক শিক্ষকই তাকে আয়নাঘরে রাখার দাবিও তুলেছিলেন। কিন্তু এতো কিছুর পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে কিভাবে সেইপ এক্সিট দিলো সেটি দেখার বিষয়।

জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন জাকির হোসাইন। ছাত্র জীবনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ১৯৯৬ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মো. জাকির হোসাইন।

সেই থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের সক্রিয় সদস্য হন তিনি। এরপর হলুদ দল মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য, তিনবার আইন অনুষদের ডিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সলর মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক জাকির।

আইন অনুষদে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের গোড়াপত্তন করেন তিনি। তিনি আইন অনুষদের সভাপতি থাকাকালীন সব চেয়ে বেশি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন। অধ্যাপক জাকির জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। সদস্য থাকাকালীন সময়ে চিহ্নিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের জজ হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিপক্ষে গিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কলাম লিখেছেন তিনি। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নানা সমালোচনা করেন। সেই কলাম তার নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করলে শিক্ষার্থীরা কমেন্ট করে প্রতিবাদ জানান। পরে তিনি আবারও ফেইসবুক স্ট্যাস্টাসে শিক্ষার্থীদের জঙ্গী বলে সম্বোধন করেন।

তিনি সেখানে লিখেন, আমার ফেইসবুক কমেন্টে কতিপয় জঙ্গী আক্রমণ করেছে, আপনারা সবাই সর্তক থাকুন। তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নির্যাতনের অন্যতম নির্দশন আয়নাঘরকে মিথ্যা ও কাল্পনিক বলে কলাম লিখেন। যেটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। পরে বিশ্বিবদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

বিল্পবী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে যখন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতন হয়, বেশ কিছুদিন আত্নগোপনে চলে যান অধ্যাপক জাকির। পরে গোপনে বিদেশে পিএইচডি ছুটির নামে পালিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার পিএইচডি ছুটি মঞ্জুর করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন