সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

শিল্প কারখানায় পলাতক আ.লীগের অর্থ সম্পাদক জসিমের দাপট, খুঁজছে পুলিশ

সোমবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

দীর্ঘ ১৭বছর ধরে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার একান্ত সচিব রিদোয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েমের ছত্র ছায়ায় থেকে হাজার কোটি কালো টাকার মালিক বনে যাওয়া আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

ফলে, উপজেলার বিভিন্ন সংগঠনের রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী ও অর্থ যোগানদাতা জসিমকে দ্রুত ইঁদুরের গর্ত থেকে খুঁজে বের করে গ্রেফতারের দাবি উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, গত ১৫ বছর ধরে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক জসিম উদ্দিন তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাজ এন্টারপ্রাইজসহ আওয়ামী লীগের ঠিকাদাররা সংঘবদ্ধভাবে কেইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএলসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একের পর একশত কোটি টাকার প্রকল্প হাতিয়ে নিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন রহস্যজনক ভাবে গত ১৩ সেপ্টেম্বর কেইপিজেডের প্রকল্প কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বড়ুয়ার মাধ্যমে মেসার্স নাজ এন্টারপ্রাইজ পান ১১০ কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে কেইপিজেডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় বিএনপির পরিচয়ধারী কিছু ব্যক্তি।

অভিযোগ উঠেছে, কেইপিজেডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে অর্থ সম্পাদক জসিম উদ্দিনের ব্যবসা বানিজ্য সবই দেখা শুনা করছেন তার ছোটভাই মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন রাশেদ। এখনও তাদের দাপটে অসহায় কেইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মকর্তারা।

একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলে, দীর্ঘদিন ধরে কেইপিজেডে টেন্ডার বাণিজ্যে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক জসিম উদ্দিন। কমিশন বাণিজ্যে এসব সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে যথাসময়ে অনেক টেন্ডার সম্পন্ন করা যায় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা আরও দ্বিগুণ বেড়েছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, জসিম উদ্দিন বৈরাগ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অবস্থায় তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই শুরু হয় মেসার্স নাজ এন্টারপ্রাইজসহ আওয়ামী লীগের ঠিকাদাররা সংঘবদ্ধভাবে কেইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএলসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একের পর এক শত কোটি টাকার লুটপাটের ঘটনা ঘটে। নিজ এলাকা উত্তর বন্দর কমিউনিটি সেন্টারের তৃতীয় তলায় নিজ অফিসে ছিলো তার রাজত্ব। গত ১৭ বছর কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে চলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ২০২৩ সালের দিকে স্থানীয় মুজিবুর রহমান নামে এক ছাত্রলীগ নেতা তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তাকে শিকার হতে হয়েছিল নির্যাতনের। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেলেও যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
 
মেসার্স নাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন কিভাবে ১১০ কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ পেয়েছেন এবিষয়ে কেইপিজেডের প্রকল্প কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বড়ুয়া কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযুক্ত আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন পলাতক থাকায় তার কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে পলাতক আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও মেসার্স নাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক জসিমকে গ্রেপ্তার করতে চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন ও কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন