বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

এক যুগ ধরে নেতৃত্বহীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি: নেতাকর্মীদের হতাশা

বুধবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় কমিটি নেই। ফলে সংগঠনের নেতৃত্বে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, যা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর হতাশা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেক নেতাকর্মী অভিযোগ করছেন, তারা নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের পরও সাংগঠনিক পরিচয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

রাজনীতি সচেতনরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সক্রিয় কমিটি থাকলেও বিএনপির মতো একটি বৃহৎ দলের এত দীর্ঘ সময় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বহীন থাকা সংগঠনের দুর্বলতা ও অদক্ষতারই প্রতিফলন। তারা বলেন, নেতৃত্বে অনিশ্চয়তা এবং সমন্বয়ের অভাবে বিএনপির কার্যক্রম প্রবাসে আগের মতো সক্রিয় নেই।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি শুধু প্রবাসে নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ প্রবাসীরা দলীয় ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের সমালোচনার জবাব দেওয়া, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে মতামত তুলে ধরা এবং রাজনৈতিক যোগাযোগ সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাই একটি সক্রিয়, সমন্বিত ও কার্যকর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি স্টেটে বিএনপির পৃথক স্টেট কমিটি থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটি না থাকায় এসব রাজ্য কমিটির কার্যক্রমে সমন্বয়ের ঘাটতি এবং নীতিনির্ধারণে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সামগ্রিক সাংগঠনিক কার্যক্রম এখন স্থবির অবস্থায় রয়েছে। তবে খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দরা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সূচনাকালে মাত্র ১০-১২টি স্টেট কমিটি ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে ১৯টিতে পৌঁছেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্টেট কমিটিগুলো গঠনের তাগিদ দিয়েছেন এবং আনোয়ার হোসেন খোকনকে এ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানকে জানিয়েছি—এখন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় এসেছে। তিনি সম্মতি জানিয়েছেন এবং বলেছেন, স্টেট কমিটিগুলো সম্পন্ন হলে কেন্দ্রীয় কমিটি করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে স্টেট কমিটিগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি থাকলে সেই সমন্বয় সহজ হতো। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নিয়মিত কমিটি হলে নতুন নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ মিলত।”

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, “স্টেট কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কাঠামো ও নেতৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একটি কেন্দ্রীয় কমিটি এখন সময়ের দাবি। এখানে অসংখ্য নেতাকর্মী আছেন, যাদের সাংগঠনিক পরিচয় থাকা জরুরি।”

বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির একটি শক্তিশালী, নিয়মতান্ত্রিক ও স্থায়ী কমিটি থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। কমিটি না থাকায় কেন্দ্রীয় নেতারা সফরে এলে স্বাগত জানানো নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। নিয়মিত কমিটি থাকলে সংগঠনে ঐক্য ফিরে আসবে।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতি করছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি না থাকায় তারা উপেক্ষিত। অথচ নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা তাদের আছে।”

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি কেন গঠন করা হচ্ছেনা জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন কৌশলে সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমাকে কেন্দ্র থেকে স্টেট কমিটি করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি তা পালন করেছি। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের কোন দিক নির্দেশনা আমাকে দেওয়া হয়নি। দল যখন আমাকে যে দায়িত্ব দেয় সে অনুযায়ী আমি কাজ করব। দল যদি বলে কাল কমিটি করতে, আমি কাল কমিটি করে দিব।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমার ব্যক্তিগত কোন মতামত নেই।

কমিটি গঠনের বিষয়টা এড়িয়ে যান বিএনপির আন্তর্জাতিক ফরেন উপদেষ্টা হুমায়ূন কবিরও। তিনি বলেন, স্টেট কমিটিগুলো তো যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে না। স্টেট ভিত্তিক কমিটি ছাড়া তো এত বড় যুক্তরাষ্ট্রে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবেনা।

সেন্ট্রাল কমিটি না করে স্টেট কমিটি করে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেন্ট্রাল কমিটি তো একটাই। যেটা বাংলাদেশে। দেশের কেন্দ্রীয় কমিটির অধিনে যুক্তরাষ্ট্রের সকল স্টেট কমিটির কার্যক্রম চলবে।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও তার সাথে আসা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা নিউইয়র্ক এলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামীলীগের নাশকতামূলক কর্মসূচির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সামনে ও বাঙিলী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা যায়। দ্বিধা-বিভক্তির মাঝেও নেতাকর্মীদের মাঝে এ ধরনের উৎসাহ ও উদ্দিপনা ধরে রাখতে হলে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একটি শক্তিশালি কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন