নিউইয়র্কে অটো, হোম ও হেলথ ইন্সু্যরেন্সের আকাশচুম্বি মূল্যবৃদ্ধি এখন সাধারণ মানুষ ও ইমিগ্রান্ট পরিবারের জীবনে বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান এই ব্যয়ের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছে নাগরিক সংগঠন সিটিজেন্স ফর এফোর্ডেবল রেটস (কার)। যারা নিউইয়র্কবাসীর পক্ষে সাশ্রয়ী ইন্সু্যরেন্স রেটের দাবি তুলছেন।
সম্প্রতি সংগঠনটি গভর্নর ক্যাথি হকুলসহ স্টেট সিনেটর ও এসেম্বলি সদস্যদের কাছে এক জরুরি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেন। তাদের অভিযোগ, নিউইয়র্কে বর্তমানে গড় অটো ইন্সু্যরেন্স প্রিমিয়াম বছরে ১,৭০০ ডলার ছাড়িয়েছে। যা জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। একইভাবে বাড়ি ও স্বাস্থ্যবীমার প্রিমিয়ামও বেড়ে চলেছে, যা নাগরিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে।
কারের মুখপাত্র হোজে বেয়োনা বলেন, প্রতিদিনই আমরা দেখছি, আমাদের পাড়ার পরিবারগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। একজন মা তার গাড়ির ইন্সু্যরেন্স প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ সেই গাড়িটিই তার সন্তানদের স্কুল বা ডাক্তারের কাছে নেওয়ার একমাত্র উপায়। তিনি আরও বলেন, অলবেনি যখন এই ইস্যুতে নীরব, তখন ওয়ার্কিং ফ্যামিলিগুলোর আমেরিকান ড্রিম দূর অপ্রাপ্য হয়ে পড়ছে।
এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে নিউইয়র্কের ছয়টি প্রভাবশালী দক্ষিণ এশীয় সংগঠন, যারা হাজার হাজার ইমিগ্রান্ট ও শ্রমজীবী পরিবারকে প্রতিনিধিত্ব করে—
বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এন্ড ইয়ুথ সার্ভিসেস: ব্রুকলিনভিত্তিক সংগঠনটি স্বল্প আয়ের বাংলাদেশি পরিবারদের ইএসএল ক্লাস, আফটার স্কুল প্রোগ্রাম, ন্যাচারালাইজেশন কোর্স ও সাশ্রয়ী আবাসন সহায়তা দিয়ে আসছে।
কাউন্সিল অব পিপলস অর্গানাইজেশন: বছরে প্রায় ৪৫,০০০ পরিবার ও ২৭,০০০ ব্যক্তিকে সহায়তা প্রদান করে সাউথ এশিয়ান ও মুসলিম কমিউনিটিকে শক্তিশালী করছে।
হিউম্যান সাপোর্ট কোয়ালিশন: আর্থিকভাবে দুর্বল বাংলাদেশি পরিবারগুলোকে সহযোগিতা দিচ্ছে।
ইন্ডিয়া হোমস ইনক: কুইন্সে ভারতীয় ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সিনিয়র নাগরিকদের সামাজিক, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করছে।
প্রজেক্ট নিউইয়র্কার: সাদার্ন কুইন্সে দক্ষিণ এশীয় ইমিগ্রান্টদের চাকরি প্রশিক্ষণ, আর্থিক শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
সখী ফর সাউথ এশিয়ান উইমেন: গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার নারীদের নিরাপত্তা, ক্রাইসিস ইন্টারভেনশন ও অ্যাডভোকেসি সার্ভিস প্রদান করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান ইন্সু্যরেন্স খরচের কারণে সাধারণ মানুষ এখন দ্বিধায় পড়ছেন—গাড়ির প্রিমিয়াম দেবেন, নাকি পরিবারের জন্য গ্রোসারি কিনবেন। ছোট ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন, কারণ বাণিজ্যিক ইন্সু্যরেন্সের দামও বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।
প্রোপার্টি ইন্সু্যরেন্স রেট বৃদ্ধির কারণে বাড়িভাড়া ও মর্টগেজ পেমেন্টেও অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। এখন অনেক ভাড়াটেকে ১০–১৫% পর্যন্ত ইন্সু্যরেন্স খরচ ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হচ্ছে।
সিটিজেন্স ফর এফোর্ডেবল রেটস জানিয়েছে, তারা নীতিনির্ধারক, কমিউনিটি সংগঠন ও সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে কাজ করছে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করা যেতে পারে তাদের ওয়েবসাইটে: citizensforaffordablerates.com।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন