রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘লিটল বাংলাদেশ’: প্রবাসে এক টুকরো মাতৃভূমি

রবিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

লস অ্যাঞ্জেলেসের থার্ড স্ট্রিটের নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে আলেকজান্দ্রিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত হাঁটলে মনে হয়, যেন ঢাকার কোনো ব্যস্ত গলিতে এসেছেন। রাস্তার কোণে নীল সাইনবোর্ডে লেখা—‘লিটল বাংলাদেশ’। এখানেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের ছোট্ট মাতৃভূমি, যেখানে চায়ের গন্ধ, আড্ডা আর বাংলা কণ্ঠস্বর মিলেমিশে গড়ে তুলেছে এক অনন্য আবাস।

হলিউড থেকে মাত্র তিন মাইল দূরের এই এলাকা আজ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংস্কৃতি, খাবার, ভাষা ও আবেগের মিলনস্থল। দোকানের সাইনবোর্ডে বাংলা নাম, বাতাসে ভেসে আসা পুরির গন্ধ, আর আড্ডায় মাতৃভূমির রাজনীতি—সব মিলিয়ে যেন শহরের ভেতর আরেক শহর।

বাংলাদেশ ইউনিটি ফেডারেশন অব লস অ্যাঞ্জেলেসের সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান আরা শিউলি বলেন, “লিটল বাংলাদেশ আমাদের কমিউনিটির হৃদয়। এখানে আমরা মাতৃভূমির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখি।”

প্রবাসী শরীফ হাসান জানান, আগে বিদেশে একাকিত্বে ভুগলেও লিটল বাংলাদেশে এসে তা কেটে গেছে। ছুটির দিনে এখানে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া আর চায়ের দোকানেই সময় কাটে। আরেকজন প্রবাসী রুমন মিয়া বলেন, “নর্থ হলিউডে থাকি, কিন্তু বাজার করতে এখানেই আসি—‘কস্তুরি’ বা ‘দেশি’-তে চা খেলে মনে হয় ঢাকায় বসে আছি।”

এ এলাকার দোকানগুলোর নামেই আছে মাতৃভূমির ছোঁয়া—কস্তুরি, দেশি, সোনার বাংলা, স্বদেশ, আমার বাংলা, বাংলাবাজার। দোকানের সাজসজ্জা, মিষ্টির দোকানের রসগোল্লা কিংবা রেস্তোরাঁর বিরিয়ানি—সবই যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।

লিটল বাংলাদেশের ইতিহাস শুরু ষাটের দশকে। পড়াশোনার জন্য আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাত ধরেই গড়ে ওঠে এই প্রবাসী বসতি। সময়ের সঙ্গে দোকান, মসজিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠন আর সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটি হয়ে ওঠে একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশি কমিউনিটি।

২০১০ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিল এলাকাটিকে ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। স্থানীয় ইতিহাসবিদ কাজী মশহুরুল হুদার তথ্যমতে, বর্তমানে এখানে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির বসবাস, যারা শহরের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

লিটল বাংলাদেশে মসজিদ, রেস্তোরাঁ, দোকানপাটের পাশাপাশি নিয়মিত হয় বৈশাখী মেলা, বাংলাদেশ ডে প্যারেড, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। শিপার চৌধুরী জানান, এখান থেকে নজরুল সাহিত্য ও সংগীতকে বিশ্বে প্রচারের উদ্যোগ চলছে—যা বাংলাদেশ সরকারও প্রশংসা করেছে।

উত্তরণ সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান মোরশেদুল ইসলাম বলেন, “লিটল বাংলাদেশ শুধু একটি এলাকা নয়, এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতিরূপ। এখানে বড় হচ্ছে নতুন প্রজন্ম, যারা প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশকে বুকে ধরে রাখছে।”

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন