আনোয়ারা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের দ্বন্দ্বে বেকায়দায় সেবাগ্রহীতারা। সাব-রেজিস্ট্রারের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে গত তিনদিন ধরে কলম বিরতি পালন করছেন দলিল লেখকরা। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কার্যক্রম। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে, ভোগান্তিতে পড়েছেন দলিল তৈরি করতে আসা মানুষ।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে সাব রেজিস্টার অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দলিল লেখকরা কেউ কাজে নেই। কিছু লোক দলিল করার জন্য সেখানে গিয়ে বিফল হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে ডুমুরিয়া রুদ্রুরা এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ্ নামে এক ভুক্তভোগী ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে একটি দলিল করার জন্য ঘুরছেন, অথচ তার জরুরি দলিলটি করতে পারছেন না তিনি।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ্ বলেন, রেজিস্ট্রারী খরচ বাড়ার কারণে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৪১ শতক জমি দানপত্র করার জন্য সাব রেজিস্ট্রারী অফিসে যোগাযোগ করি। জমিটির মূল্য আসছে ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা এবং সরকারি উৎস কর দিতে হচ্ছে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে সাব রেজিস্ট্রারের সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবী করেন একজন দলিল লেখকের মাধ্যমে। আজ এক সপ্তাহ ধরে ঘুরেও কোনো প্রতিকার মিলেনি।
জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা বৃদ্ধ ফখরুলদ্দিন (৬৫) জানান, মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। জরুরি ভাবে টাকার জন্য জমি বিক্রি করলাম। এখন পড়েছি আরেক বিপাকে, সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের দ্বন্দ্বের কারণে আজকেও জমি রেজিস্ট্রি করতে পারলাম না। আমাদের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।
সেবা নিতে আসা একাধিক স্থানীয়রা জানান, সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের আন্দোলন কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তারা নিজেদের সমস্যা আলাপ আলোচনা করে সমাধান করতে পারেন। কিন্তু দলিল সম্পাদন বন্ধ করা কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না।
মো. জসিম উদ্দিন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, সিংহরা মৌজায় একটি জমি রেজিস্ট্রারী দিতে আসছি, খতিয়ানে এসএম জসিম উদ্দিন এবং আইডি কার্ডে মো. জসিম উদ্দিন থাকার কারণে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫ অক্টোবর একইদিনে পাওয়ার ৪৪৩৫ ও পাওয়ার মূলে হস্তান্তর ৪৪৩৭ নম্বরে দুটি দলিল সম্পাদন করেন ৫ লাখ টাকা ঘুষের মাধ্যমে। কিন্তু একইদিনে নকল আসার আগে রহস্যজনক ভাবে দুটি দলিল সম্পাদনের চলছে আলোচনার ঝড়। এই দুটি দলিলই লিখেন মো. মোরশেদুল আলম মুন্সী।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, এটি সাব রেজিস্টার করেছেন, আমি কিছু জানি না।
আনোয়ারা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম মুন্সি বলেন, সাব রেজিস্ট্রির কাজে ভুল ধরে অনৈতিকভাবে অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। ফলে জমি রেজিস্ট্রি করা দলিল লেখকদের মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির কারণে দলিল লেখকরা কলম বিরতি পালন করছেন। এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
দলিল লেখক ও সাব রেজিস্টার অফিসের কর্মকর্তারা জানান, নামের আংশিক ভুল থাকলে প্রত্যয়ন পত্র দেখানোর পরও বাড়তি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা গুনতে হয়ে সাব রেজিস্টারের জন্য। দানপত্র, পাওয়ার অব আ্যটর্নি দলিল যেকোন ব্যক্তিকে দেওয়া এবং নেওয়ার বিধান থাকলেও তিনি বিভিন্ন অযুহাতে মোটা অংকের টাকা ছাড়া দলিল রেজিষ্ট্রেশনে অপারগতা প্রকাশ করেন। পাওয়ার মূলে দলিল হস্তান্তর করতে গেলে পৃথক পৃথক দলিল রেজিষ্ট্রেশন করতে প্রতি দলিলে আবারও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন তিনি। এমনকি ঘুষ ছাড়া তিনি দলিলই করতে চান না।
এছাড়াও সরকারি ফিসের টাকা ও অফিসের রেকর্ড রুমে সরকারি স্টাফ ছাড়া অন্য কারো টাকা নেওয়া বা প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও অফিসের ঝাড়ুদার দিয়ে দলিলের বিভিন্ন জাল-জালিয়াতিসহ টাকা লেনদেনের কাজ করান। উনার এসব কার্যক্রমে দলিল লেখকরা অতিষ্ঠ হয়ে গত সোমবার থেকে কলম বিরতি পালন পালন করে যাচ্ছে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা সাব রেজিস্টার জোবায়ের হোসেন অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সরকারি নিয়ম মেনে অফিসের সব কাজ সম্পন্ন করা হয়।
জানতে চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি৷ এইমাত্র আপনার মাধ্যমে শুনলাম। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন