মীরা নায়ার— নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহারান মামদানির মা। চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার ক্যামেরার আলোয় জীবনের বাস্ববতা, সংস্কৃতি ও মানবিকতার গল্প ফুটে ওঠে। বহু আগেই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। ৬৮ বছর বয়সি এই চলচ্চিত্র নির্মাতা আজও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছেন হলিউড-বলিউডের একজন সফল ও প্রভাবশালী পরিচালক হিসেবে। তিনি অল্প বাজেট, গভীর মানবিক গল্প ও আপসহীন শিল্পদৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন বারবার। মায়ের থেকে কোনো অংশে কম নন ছেলে মামদানিও। নিউইয়র্কের সর্বকনিষ্ঠ ও প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে ইতিমধ্যেই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন। নিজের নৈতিকতা দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন মুসলিমসহ ইহুদিদের হৃদয়েও। মায়ের সাহসী ও নিবেদিত শিল্পজীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে নিউইয়র্ক শহরের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় লিখছেন তিনি। এপি।
১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সালাম বম্বে’-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ঝড় তোলেন মীরা নায়ার। মাত্র ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ডলারে নির্মিত ছবিটি বিশ্বজুড়ে ৭৪ লক্ষ ডলার আয় করে। এটি ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে মনোনীত হয়। পাশাপাশি কান চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নেয় ‘ক্যামেরা ডি’অর। এই ছবির আয় দিয়ে নায়ার প্রতিষ্ঠা করেন সালাম বালাক ট্রাস্ট। যা আজও দিল্লি ও মুম্বাইয়ের পথশিশুদের শিক্ষা ও আশ্রয়ের দায়িত্ব পালন করছে। ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মিসিসিপি মাসালা বাণিজ্যিক সাফল্য পায়। ১৯৮৯ সালে এই ছবির গবেষণার কাজে উগান্ডা সফরে গিয়েই তার সঙ্গে পরিচয় হয় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদ মামদানির। দুই বছর পর ১৯৯১ সালে মাহমুদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নায়ার। সে বছরই জন্মগ্রহণ করেন জোহরান মামদানি। মাহমুদ মামদানি ১৯৪৬ সালে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় বড় হন। তিনি আফ্রিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী উপনিবেশবাদ ও রাজনৈতিক সহিংসতা বিশ্লেষকদের একজন। তিনি ১৯৭৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হ্যারবার্ট লেহম্যান প্রফেসরশিপ অব গভর্নমেন্ট পদে আছেন।
বিয়ের পর ২০০১ সালে ‘মনসুর ওয়েডিং’ ছিল নায়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। মাত্র ১৫ লক্ষ ডলারে ৩০ দিনে শুটিং করা ছবিটি বিশ্বজুড়ে ৩ কোটি ডলারেরও বেশি আয় করে। ভারতের মধ্যবিত্ত জীবনের ঐতিহ্য, আধুনিকতা ও পারিবারিক টানাপোড়েনকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই সিনেমা ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ সম্মান স্বর্ণ সিংহ অর্জন করে। নারী পরিচালক হিসাবে তিনিই প্রথম এই সম্মাননা অর্জন করেন। চলচ্চিত্রের বাইরে সমাজসেবায়ও মনোযোগ দেন নায়ার। সালাম বালাক ট্রাস্টের পাশাপাশি ২০০৪ সালে তিনি মাইশা ফিল্ম ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পূর্ব আফ্রিকার উদীয়মান নির্মাতাদের জন্য বিনামূল্যের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। ২০১২ সালে তিনি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ পান। মা-বাবার মতোই এক সংগ্রামী, নীতিবান ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হয়ে উঠেছেন জোহরান মামদানিও। ১৯৫৭ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের ওডিশার রাউরকেলায় জন্মগ্রহণ করেন নায়ার। বেড়ে উঠেছেন ওডিশার রাজধানী ভুবনেশ্বরে। মীরা নায়ার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড থেকে পড়াশোনা করেন। ‘সিনেমা ভেরিতে’ কোর্স করার পর ডকুমেন্টারি নির্মাণে মন দেন তিনি। ১৯৮৯ সালে নিজের প্রযোজনা সংস্থা মিরাবাই প্রতিষ্ঠা করেন। যা তাকে স্বাধীনভাবে সাংস্কৃতিক পরিচয়, প্রবাসজীবন ও প্রান্তিক কণ্ঠস্বর নিয়ে কাজ করার স্বাধীনতা দেয়।



চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন