বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

সৌদি যুবরাজকে খাসোগি হত্যা নিয়ে প্রশ্ন, সাংবাদিককে কটূক্তি ট্রাম্পের

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২০, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার ওভাল অফিসে এক মার্কিন সাংবাদিককে কটূক্তি করেন। ওই সাংবাদিক ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটে ওয়াশিংটন পোস্টের এক কলামিস্টকে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়ে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রশ্ন করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলেছে, যুবরাজের নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছিল।

এ সময় এবিসি নিউজের সাংবাদিক মেরি ব্রুসকে ট্রাম্প বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করে আমাদের অতিথিকে অস্বস্তিতে ফেলবেন না। পরে তিনি ওই প্রশ্নকে ভয়ংকর, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং একেবারে বাজে বলে অভিহিত করেন।

নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প আরও বলেন, অনেকেই ওই ভদ্রলোককে পছন্দ করত না। আপনি তাকে পছন্দ করুন বা না করুন, মাঝে মাঝে এমন ঘটনা ঘটে। যুবরাজ অবশ্য খাশোগি হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।

এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট এবিসি নিউজকে একটা বাজে কোম্পানি বলে উল্লেখ করে বলেন, নেটওয়ার্কটির সম্প্রচার–লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, তার শীর্ষ সম্প্রচার নিয়ন্ত্রক ব্রেনডান কার এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।

সৌদি এজেন্টদের হাতে খাশোগির মৃত্যু ও অঙ্গচ্ছেদের ঘটনার পর সৌদি যুবরাজের একটি প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। আর সেখানেই এ কথোপকথনগুলো হয়। খাশোগির মৃত্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় ওঠে।

এবিসি নিউজের হোয়াইট হাউস সম্পর্কিত প্রধান সংবাদদাতা ব্রুসের প্রতি ট্রাম্পকে বেশ হতাশ মনে হচ্ছিল। ট্রাম্পকে ব্রুস আরেকটি প্রশ্ন করলে আবারও তাকে অপমানিত করেন ট্রাম্প। ব্রুস তাকে জিজ্ঞেস করেন, ট্রাম্প কেন একতরফাভাবে অর্থদাতা জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে সম্পর্কিত ফাইলগুলো প্রকাশের নির্দেশ দেননি।

এর প্রত্যুত্তরে ট্রাম্প মেরি ব্রুসকে বলেন, প্রশ্ন করা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই; আপত্তি আপনার আচরণ নিয়ে।

কড়া ভঙ্গিতে তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় আপনি একজন জঘন্য রিপোর্টার। আপনি যেভাবে প্রশ্নগুলো করেন, সেটা আপত্তিকর। আপনি একজন জঘন্য মানুষ এবং একজন জঘন্য রিপোর্টার।

ন্যাশনাল প্রেস ক্লাব মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছে যে, মিস্টার খাশোগির মৃত্যু ছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আক্রমণ।

সংস্থাটি বলেছে, একজন সাংবাদিককে হত্যার ঘটনাকে ছোট করে দেখা বা তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার মতো মন্তব্য বাস্তব জগতে প্রভাব ফেলবে। এগুলো মূল নীতিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। সাংবাদিকদের নির্ভয়ে কাজ করতে সক্ষম হওয়া উচিত, কোনো হিংসা বা প্রতিশোধের ভয়ে নয়।

যদিও ট্রাম্প নিয়মিতই সংবাদমাধ্যমকে হেয় করে কথা বলেন। তবুও তিনি সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের ডজনখানেক প্রশ্নের উত্তর দেন, কখনও কখনও একই দিনে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কয়েকবারও সাক্ষাৎ করেন। তিনি পুরুষ ও নারী উভয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তীব্র অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেছেন। তবে নারীদেরই তার সবচেয়ে কঠোর অপমানগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে।

গত শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানে বসে ট্রাম্পের কাছে ব্লুমবার্গ নিউজের সাংবাদিক ক্যাথরিন লুসি যখন এপস্টিন সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশ না করার কারণ জানতে চান, তখন ট্রাম্প তাকে বাধা দেন এবং বলেন, ‘চুপ! চুপ করো, পিগি।’

ওই ধরনের স্কুল জীবনের অশ্রাব্য ভাষা ট্রাম্প আগেও ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক মিস ইউনিভার্স অ্যালিসিয়া মাচাদো। তিনি জানান, ওজন কমানোর জন্য চাপ দেওয়ার সময় ট্রাম্প তাকে মিস পিগি বলে ডাকতেন।

তবে মঙ্গলবার ব্লুমবার্গ নিউজ এবং এবিসি নিউজ তাদের প্রতিবেদকদের ওপর হওয়া কটূক্তি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প বেশ কয়েকবার এবিসির সম্প্রচার লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। প্রায়শই তাকে তার অপছন্দের প্রশ্ন করা হলেই তিনি এমন হুমকি দিয়েছেন। গত বছর তিনি এবিসি নিউজের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে মামলাও করেছিলেন। পরে নেটওয়ার্কটি ওই মামলা মীমাংসার জন্য ১৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টের মাধ্যমে লেট-নাইট হোস্ট সেথ মেয়ার্সের সমালোচনা করেন। ট্রাম্প লেখেন, মেয়ার্স ট্রাম্প ডিরেঞ্জমেন্ট সিনড্রোমে (টিডিএস) ভুগছেন, যা নিরাময়যোগ্য নয়। তিনি মেয়ার্সের নেটওয়ার্ক এনবিসি’র কাছে তাকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানান। প্রেসিডেন্টের এই বার্তাটি আবার এক্স প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করেন ব্রেনডান কার।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে, ট্রাম্প অবশেষে হার মেনে ব্রুসের উত্তর আর না দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। ট্রাম্প বলেন, আপনার উচিত ফিরে যাওয়া এবং কীভাবে রিপোর্টার হতে হয়, তা শেখা। তিনি আরও বলেন, ‘আপনার কাছ থেকে আর কোনো প্রশ্ন চাই না।’

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন