নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা কর্মকান্ডে জড়িতের দায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সিএফসি ও সিক্সটিনাইন গ্রুপের ছয় জন করে ১২ বহিস্কৃত কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও তা মানছেন না অনেকে। হল ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি অনেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর এসব বিষয়ে রীতিমতো ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ,রেসিডেন্স এন্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভার এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে চবি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ১২ কর্মীকে বহিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদের মধ্যে দুইজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করার অভিযোগে এক বছর ও বাকিদের ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিস্কৃতরা হলেন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের (১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ নাঈম, একই শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের সাইফুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের (১৬-১৭) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম নায়েম, পরিসংখ্যান বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের আকিব জাবেদ, ইতিহাস বিভাগের (১৫-১৬) শিক্ষাবর্ষের জুনায়েদ হোসেন জয়, অর্থনীতি বিভাগের (১১-১২) শিক্ষাবর্ষের ফরহাদ। এদের মধ্যে আশরাফুল আলমের বহিস্কারের মেয়াদ ১ বছর ও বাকিদের ৬ মাস। এরা সবাই শাখা ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
অপরদিকে ক্যাম্পাসে সিএফসি গ্রুপের নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচিত বহিস্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন, আইন অনুষদের (১৪-১৫) শিক্ষাবর্ষের মির্জা কবির সাদাফ, একই শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের অহিদুজামান সরকার, সমাজতত্ব বিভাগের আরিফুল ইসলাম, আইন অনুষদের (১৭-১৮) শিক্ষাবর্ষের খালেদ মাসুদ, আরবি বিভাগে (১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের তৌহিদ ইসলাম, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের (১৮-১৯) শিক্ষাবর্ষের তানজিল হোসেন। এদের মধ্যে মির্জা কবির সাদাফের সাজা ১ বছর এবং বাকিদের ৬ মাস।
এইদিকে বহিস্কার ঘোষণার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় ১৭ অক্টোবর থেকে তাদের সাজা কার্যকর হবে। এসময় তারা কোন একাডেমিক কার্যক্রম বা হল-ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে না।
তবে বহিস্কারের মেয়াদ ২ মাস পার হওয়ার আগেই ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে বহিস্কৃত অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। অনেককে আবার ছাত্রলীগের পদস্থ নেতাদের সাথেও বিভিন্ন কার্যক্রমে দেখা গিয়েছে। আবার অভিযোগ উঠেছে বহিষ্কার হয়েও অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায়। আর অধিকাংশ বিভাগীয় সভাপতি শিক্ষার্থীদের শাস্তির বিষয়েও অবগত নন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের কর্মপদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা৷
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা চলছে। শেষ হয়েছে একই শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের পরীক্ষা। তবে এসব পরীক্ষায় কোন প্রতিবন্ধাতা ছাড়াই ওই তিন বিভাগের বহিস্কৃত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তারা হলেন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের (১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ নাঈম, একই শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের সাইফুল ইসলাম এবং আরবি বিভাগের তৌহিদ ইসলাম (আইডি নং: ২০১০১১২৭)।
এইদিকে বহিস্কৃত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় শিক্ষকদের সাথে ৬ ডিসেম্বর যোগাযোগ করে প্রতিবেদা ৷ তারা সকলেই জানান, শিক্ষার্থী বহিষ্কারের বিষয়ে তাঁরা অবগত নন৷ এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে কোন রকম চিঠি তাদের কাছে আসে নি। আর বহিস্কৃত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছেন এমন বিষয় সত্য কি না- তা জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘আজ-কাল’ জানাচ্ছি বলে এড়িয়ে যান।
জানতে চাইলে মঙ্গলবার চবির আরবি বিভাগে সভাপতি ড. মুহাম্মাদ শাযআত উল্লাহ ফারুকী বলেন, কোন শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে এরকম কোন চিঠি আমাদের কাছে আসে নি। সে পরীক্ষা দিয়েছে কি না যাচাই করে দিখতে হবে৷
এইদিকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মাখন চন্দ্র রায় বলেন, বহিস্কার সংক্রান্ত কোন চিঠি আমরা পাই নি। যদি বহিষ্কার হওয়ার পর কেউ পরীক্ষা দেয় তবে তার পরীক্ষা বাতিল করা হবে৷ বাংলা বিভাগের সাময়িক বহিস্কৃত ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে কি না এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গতকাল সোমবারের মতো মঙ্গলবারও আগামীকাল জানাবেন এমন বিষয় বলেন৷
এইদিকে জানতে চাইলে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বহিষ্কার সংক্রান্ত কোন নথি আমাদের কাছে আসে নি। মোঃ নাঈম নামে বহিষ্কারের সাজা পাওয়া ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চবি প্রক্টর অধ্যাপক রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, বহিস্কারের সাজা পাওয়া কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। যদি কেউ পরীক্ষা দিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। সংশ্লিষ্ট বিভাগ বহিষ্কার সংক্রান্ত কোন চিঠি পায় নি এমন অভিযোগ তুলে ধরলে চবি প্রক্টর বলেন, কেন চিঠিগুলো পৌঁছালো না তা আমরা খতিয়ে দেখছি৷
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন