ইফতেখার ইসলাম: শীতের সকাল। তখনও গাছের পত্র পল্লবে গড়িয়ে টপটপ শব্দে ঝরছে শিশিরকণা। পাখিরাও কিচিরমিচির শব্দে নতুন দিনের জানান দিচ্ছে। ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু হীরকখণ্ডের মতো চকচক করে জ্বলছে। ঠিক তখনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বোটানিক্যাল গার্ডেনের পুকুরপাড়ে জমেছে কয়েকজন উচ্ছ্বাসিত তরুণ-তরুণী। তাদের হাতে বস্তা ভর্তি বাজার। কারও হাতে হাড়ি পাতিল, বটি। আবার কেউ কেউ জড়ো হয়েছে বেলুন, পোস্টার ব্যানার ও গিটার নিয়ে।
দীর্ঘদিন তাদের একসাথে দেখা হয় নি। নানান জটিলতায় আটকে নড়বড়ে হয়ে পড়েছিলো তাদের বন্ধন। তার উপর করোনার আঘাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো সেই দূরত্ব। অবশেষে মিটেছে তাদের জমে থাকা সকল আক্ষেপ। একসাথে এক সারিতে ঝড়ো হয়েছে তারা। বলছিলাম গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হওয়া চবির মিরসরাইয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘মীরসরাই স্টুডেন্টস্ এসোসিয়েশনের’ চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানের কথা।
সংগঠনটির চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানে ছিলো নজরকাড়া সব আয়োজন। ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনমেলায় সেদিন মুখরিত হয়ে উঠেছিলো বায়োলজি পুকুর পাড়। কোন কৃত্রিমতা নয় ঠিক যেন চিরাচরিত বাংলার ছেলে মেয়েদের ছোটবেলার চড়ুইভাতি।
প্রথমে মাটি খুঁড়ে ইটের সাহায্য তৈরি হয় দুটো চুলো। তার উপর পাতিল বসিয়ে চলে রান্নাবান্নার কাজ। একদল আগুন জ্বালিয়ে সাহায্য করছে তো আরেকদল প্রস্তুত করছে রান্নার জিনিসপত্র। আবার কেউবা শীতের ঠান্ডা উপেক্ষা করে পুকুরে নেমেছে পানি তুলতে। ঠিক এভাবেই শিক্ষার্থীরা যেন ফিরে গেলো খনিকের বাল্যবেলায়।
শুধু রান্নাবান্না বা খাওয়াতেই শেষ নয় এই অনুষ্ঠান । রান্না শেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে হরেক রকমের খেলাধুলা। যার মধ্যে ছিলো, বেলুন পাসিং, ঝুড়িতে বল ফেলা, কুইজ, লটারির মাধ্যমে ছড়া, কবিতা, কৌতুক ও বিভিন্ন মজাদার বিষয়ে আড্ডা। এছাড়া গলায় গলা মিলিয়ে ছেলে মেয়ে একসাথে মেতেছিলো গানের আড্ডায়ও।
মুরাদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আজকের এই আয়োজন আমার জন্য সত্যিই অনেক বড় পাওয়া। ব্যস্ততার কারণে সময় হয়ে উঠে না। তবে আজ অনেক আগ্রহ নিয়ে এসেছিলাম আর তা পূরণও হয়েছে। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমে এই প্রোগ্রাম কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর হয়েছে। সিনিয়র জুনিয়র সবাই মিলে মিশে খুব আনন্দের সাথে কাজ করেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সবসময় বিরাজমান ছিলো।এই বন্ধন আরো দৃঢ় হোক এই কামনা করি। সারাদিন এত মজা হয়েছে যে বুঝতেই পারিনি কখন বিকেল হয়ে গেছে।
আনিকা আনতারা রিয়া নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল কখন যে সময়গুলো চলে গেলো বুঝলামই না।সাধারণত এধরনের প্রোগ্রামগুলোতে রান্নাবান্না করতে করতেই পুরো সময় চলে যায়! অথচ আজ আমাদের খাওয়া দাওয়ার সাথে সাথে গেইমস ছিলো, র্যাফেল ড্র ছিলো। সব মিলিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ প্রোগ্রাম পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এত ব্যস্ততার মধ্যে এমন প্রোগ্রাম মনে শান্তি এনে দেয়। আর এসোসিয়েশনের প্রথম চড়ুইভাতি, প্রথম এত বড় প্রোগ্রাম। আবেগটাই আজ অন্যরকম ছিলো সবার মধ্যে।
এইদিকে অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন খেলায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন সংগঠনটির সভাপতি শরীফুদ্দিন চৌধুরী শিবলু ও সাধারণ সম্পাদক ইবনুল ইনতিসারসহ অন্যন্যরা। এসময় তারা সফলভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্নের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে সকলকে সংগঠনটির পাশে থাকার আহ্বানও জানান।
আইআই/সিএন
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন