নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জামাল খান (৩৩)। তিনি সিটির ১০ নম্বর ডিস্ট্রিক্টে ডেমোক্রেট দল থেকে নির্বাচনে লড়ছেন। তার সাথে প্রার্থী হয়েছেন আরো ৪ জন। তার মধ্যে ডেমোক্রেট দলের ৩ জন এবং একজন রিপাবলিকান রয়েছেন।
আগামী ৭ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে নির্বাচিত হতে পারলেই ৮ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পাবেন তিনি। জামাল খান এর আগে একই সিটির কাউন্সিলর পদে লড়েছিলেন। কিন্তু সামান্য ভোটের কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন লাভে সক্ষম হননি। এবারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গুগল- ইন্টেলের মতো তথ্য-প্রযুক্তির জায়েন্ট কোম্পানিগুলোর হেডকোয়ার্টার ও বিভিন্ন অফিসে সমৃদ্ধ প্রযুক্তির বিশ্ব রাজধানীখ্যাত সিলিকন ভ্যালিসহ সাউদার্ন উপকূলীয় অঞ্চলের সান্তা ক্লারা ও আলমেদা কাউন্টির এ্যাশল্যান্ড, ক্যাস্ত্রো ভ্যালি, চেরিল্যান্ড, ফেয়ারভিউ, ফ্রিমন্ট, হ্যায়ার্ড, নিউয়ার্ক, স্যান লিন্দ্রো, স্যান লরেঞ্জো এবং ইউনিয়ন-এই ১১ সিটি নিয়ে গঠিত এ নির্বাচনী এলাকায় ভোটারের সংখ্যা ৯ লাখের বেশি।
যাদের ৪৫ শতাংশ এশিয়ান, ৩০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ, ২০ শতাংশ হিস্পানিক এবং বাকি ৫ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ । এশিয়াদের মধ্যে চায়না এবং সাব-কন্টিনেন্টের জনসংখ্যাই বেশি। এছাড়া এই অঞ্চলের সিংহভাগ ডেমোক্রেট দলের সাপোর্টার হিসেবে পরিচিত।
নির্বাচনের বিষয়ে জামাল খান বলেন, “আমি ভোটারদের নিয়ে আশাবাদী। তারা আমাকে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচনের আগে আমি মানুষের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করছি। তাদের কথাগুলো শুনার চেষ্টা করছি এবং তাদের কাছে আমার পরিকল্পনা তুলে ধরছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমি এর আগেও শহরের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করেছি। আর ছোট থেকে এই শহরে বড় হয়েছি। আমি বুঝতে পারি কোন বিষয়গুলো এই শহরের মানুষের উপকারে আসবে, কিভাবে মানুষের সংকট কাটবে। এ সময় তিনি এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য মনোনীত হওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক ফলাফল দেখছেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। “
কে এই জামাল খান:
জামাল খান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১৯৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের মাত্র ৪ মাস বয়সে বাবা ড. মাহাবুব খানের সাথে পরিবারসহ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান জমাল খান। সেখানকার বে এলাকার পাবলিক স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন তিনি।
হাইস্কুল ভ্যালেডেক্টেরিয়ান হিসেবে গ্র্যাজুয়েশনের পর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলেতে অধ্যয়ন করেন। একইসঙ্গে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অলংকার শাস্ত্রে মেজর করেন। মাইনর করেছেন বিশ্ব-দারিদ্রতা নিয়ে। অত্যন্ত মেধার সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন সবগুলোতেই।
জামাল খান ম্যাসাচুসেটসের হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি মুসলিম আইন ছাত্র সমিতির সভাপতি এবং দক্ষিণ এশীয়া আইন ছাত্র সমিতির কমিউনিকেশন চেয়ার ছিলেন। তিনি হার্ভার্ড হিউম্যান রাইটস জার্নালের ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন।
জনসেবায় অবদান:
জামাল খান দায়িত্ব পালন করেছেন হার্ভার্ড হিউম্যান রাইটস জার্নালের ম্যানেজিং টেকনিক্যাল এডিটরের। তিনি আন্ডার গ্র্যাজুয়েটকালে কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলসির সান ফ্রান্সিসকো অফিসে ইন্টার্ন করেন। মার্কিন বহুজাতিক সমাজে বসবাস করলেও বাংলাতেও কথা বলতে পারেন অনর্গল।
আইন স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর খান প্রেসিডেন্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ফেলোশিপ প্রোগ্রাম লাভ করেন। তিনি হোয়াইট হাউস অফিসের আন্তঃসরকারি বিষয়ক কার্যাবলি, হোয়াইট হাউসের পরিবেশগত গুণমান সম্পর্কিত কাউন্সিল এবং খাদ্য ও পুষ্টি পরিষেবায় কাজ করেছেন। খান রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ওবামা প্রশাসনের বিভিন্ন নীতিগত অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে- ন্যূনতম মজুরি, অসুস্থ এবং পারিবারিক ছুটিতে বেতন প্রদান, ভোট দেওয়ার অধিকার, বন্দুক সহিংসতা প্রতিরোধ, পেশাগত লাইসেন্সিং এবং ওপিওড সংকট।
খান ফিলাডেলফিয়ায় ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে অ্যাক্সেস কন্ট্রোল ভলান্টিয়ার ছিলেন। তিনি কমলা হ্যারিসের লস অ্যাঞ্জেলেস সদর দফতরে সিনেট প্রচারের জন্য কাজ করেছেন এবং তারপরে লাস ভেগাস, নেভাদার সদর দফতরে সিনেট প্রচারের জন্য ক্যাথরিন কর্টেজ মাস্টোর ডেপুটি ডিজিটাল ডিরেক্টর হিসেবে একটি পদ গ্রহণ করেছেন। এরপরে খান বে এরিয়াতে ফিরে আসেন এবং এসসিএন স্ট্র্যাটেজিস (বর্তমানে বিয়ারস্টার স্ট্র্যাটেজিস নামে পরিচিত) একটি রাজনৈতিক পরামর্শদাতার জন্য কাজ করেন। খান সান জোসের মেয়র স্যাম লিকার্ডোর পুনঃনির্বাচনের প্রচারণার জন্য অর্থ ও তথ্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আইআই/সিএন
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন