একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখাতে সাহায্য করবে। তাই আজকে আমরা একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০% (৮.৪ মিলিয়ন) মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, WHO-2014 | World Health Organization – Diabetes Country Profile, 2016 – এর মতে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে প্রতি বছর মারা যায় ৬০৬০ পুরুষ এবং ৪৭৬০ মহিলা যাদের বয়স ৩০-৬৯ বছরের মধ্যে। ৭০ বা তার ওপরের বয়সে মারা যায় ৮২২০ পুরুষ এবং ৭৩৯০ মহিলা। ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিলতায় পুরুষ ৪.৬% এবং মহিলা ৭.৪% ভোগে।
বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটায় এরকম প্রধান পাঁচটি কারণের মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম।
তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মানুবর্তী জীবন এবং ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ডায়াবেটিস রোগীর দৈনিক খাদ্য তালিকা
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলেই যে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিতে হবে, তা নয়। আপনি বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পারবেন, তবে কিছু খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ:
- বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া – নানা রকমের ফলমূল, শাকসবজি ও কিছু শ্বেতসার-জাতীয় খাবার (যেমন লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও আলু)।
- চিনি, লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবারের পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দেওয়া, অর্থাৎ যতটুকু না খেলেই নয় ঠিক ততটুকুই খাওয়া।
- প্রতিদিন সকালের নাশতা, দুপুরের ও রাতের খাবার সময়মত খাওয়া। কোনো বেলার খাবার যেন বাদ না পড়ে ।
আপনার যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। এভাবে পরিবর্তন আনা আপনার জন্য সহজ হবে। একেবারে সম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলার চেষ্টা না করাই ভালো।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য পাচঁটি প্রধান গ্রুপ বা পদের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এই আর্টিকেলে সেই তথ্যগুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
- ফলমূল ও শাকসবজি,
- শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার, যেমন লাল বা বাদামী চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা পাউরুটি,
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিম, মাছ, মাংস, শিম ও অন্যান্য বীন, ডাল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম,
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, যেমন দই, ছানা ও পনির, এবং
- বিভিন্ন ধরনের তেল, মাখন, ঘি।
আপনার দৈনিক কতটুকু খাবার ও পানীয় প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক পরিশ্রম এবং আপনি আপনার ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন তার ওপর। সুষম খাদ্যাভ্যাসের অর্থ হল নির্দিষ্ট কিছু খাবার বেশি পরিমাণে এবং অন্যান্য খাবারগুলো কম পরিমাণে খাওয়া। আবার, কেবল এক ধরনের খাবার দেহের সব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মূল হল বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য আনা যায় প্রতিদিন মূল পাঁচটি গ্রুপের প্রত্যেকটি থেকে বিভিন্ন খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে।
আরো পড়ুন: মৃগী রোগে বিভ্রান্তি নয়; প্রয়োজন সচেতনতা
এখানে প্রত্যেক গ্রুপের খাবার নিয়ে আলোচনা করা হবে। এগুলোর কোনোটি আপনার হার্টকে সুরক্ষিত রাখে, আবার কোনোটি রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এসব খাবারের সঠিক সমন্বয়ে তৈরি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কীভাবে ডায়াবেটিসের বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে তা জেনে রাখা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এখন পাঁচটি গ্রুপের প্রতিটির ভূমিকা, উপকারিতা, কোন গ্রুপ থেকে কী পরিমাণে খাবেন এবং কী কী খেতে পারেন তা তুলে ধরছি।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় ফল ও সবজি
ডায়াবেটিস থাকলে যে আপনি ফলমূল খেতে পারবেন না এমন কোন কথা নেই। ফলমূল ও শাকসবজিতে সাধারণত ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে; এগুলো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আঁশ তথা ফাইবারে পরিপূর্ণ। তাছাড়া এগুলো প্রত্যেক বেলার খাবারে নতুন স্বাদ ও বৈচিত্র্য যোগ করে।
টাটকা, ফ্রোজেন, শুকানো কিংবা ক্যান ও টিনের বোতলে প্রক্রিয়াজাত যেকোন ধরনের ফলই খাওয়া যায়। শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা পুরণ করার জন্য যত প্রকারের রঙ-বেরঙের ফল খাবেন, ততই ভালো। তবে ফলের জুস ও স্মুদি না খেলেই ভালো, কারণ এতে আঁশের পরিমাণ খুব কম থাকে।
আপনি যদি খাদ্যতালিকায় থাকা শর্করার পরিমাণ কমিয়ে এনে লো-কার্ব ডায়েট মেনে চলতে চান, তাহলে হয়তো আপনি খাদ্যতালিকা থেকে ফল ও শাকসবজি বাদ দিতে চাইবেন। তবে এমনটা না করে এগুলো আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে নিচের তালিকা থেকে তুলনামূলকভাবে কম শর্করাযুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল বেছে নিন।
ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার উপকারিতা
- আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
- আপনার শরীরকে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা, স্ট্রোক ও কয়েক ধরনের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত রাখে।
কী পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন?
দিনে অন্তত পাঁচ পরিবেশন ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এক পরিবেশন = এক হাতের তালুতে যে পরিমাণ খাবার আঁটে।
ডায়াবেটিস রোগী কোন ফল ও শাকসবজি খেতে পারেন?
- এক ফালি বাঙ্গি বা জাম্বুরা খেতে পারেন, সাথে একটু টক দই মিশিয়ে নিতে পারেন। যেকোনো ধরনের মৌসুমি ফলই খাওয়া ভালো।
- খেজুর, আলুবোখারা এগুলোও খাওয়া যায়।
- খিচুড়ি, পাস্তা ও অন্যান্য রান্নায় গাজর, মটরশুঁটি, বরবটি ও শিম ব্যবহার করুন।
- ভাতের সাথে মটরশুঁটি, মাংসে বেশি করে পেঁয়াজ বা একমুঠো পালংশাকও যোগ করা যেতে পারে।
- কম শর্করাযুক্ত শাকসবজির উৎস হিসেবে মাশরুম, শশা, পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ও লেটুস খাওয়া যেতে পারে।
- বরই ও তরমুজ কম শর্করাযুক্ত ফলের ভালো উৎস। যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা বিদেশি ফলের মধ্যে আভোকাডো, পীচ ও বিভিন্ন বেরি খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার
শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে আলু, ভাত, রুটি, নানরুটি, পাস্তা, পাউরুটি ও কাঁচকলা। এগুলোর সবগুলোতেই শর্করা থাকে, যেগুলো আমাদের শরীরের ভেতরে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। এই গ্লুকোজই আমাদের দেহের কোষগুলোর জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
সমস্যা হল, কিছু শ্বেতসারজাতীয় খাবার খুব দ্রুত রক্তে সুগার তথা গ্লুকজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এসব খাবারকে বলা হয় উচ্চ ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই)’-যুক্ত খাবার।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কী? |
---|
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এমন একটি স্কেল যা একটি খাবার রক্তে সুগারের মাত্রা কত দ্রুত বা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দেয় তার ওপর ভিত্তি করে বানানো। যেসব খাবার রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, সেগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, আর যেগুলো রক্তে সুগারের মাত্রাকে ধীরে ধীরে প্রভাবিত করে সেগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। |
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবারগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভালো। এমন কিছু শ্বেতসারজাতীয় খাবার হল লাল চাল ও বাসমতি চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও পাস্তা এবং লাল আটার পাউরুটি। এগুলোতে আঁশের পরিমাণও বেশি থাকে, যা আপনার পরিপাকতন্ত্রকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। তাই খাবারে শর্করার পরিমাণ কমাতে চাইলে আগে সাদা চালের ভাত ও সাধারণ আটা-ময়দার রুটি ও পাউরুটি খাওয়া কমান।
শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতা
- এসব খাবারের আঁশ আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- নির্দিষ্ট কিছু শ্বেতসার আপনার রক্তে সুগারের মাত্রাকে ধীরে ধীরে প্রভাবিত করে।
- গোটা শস্যদানা আপনার হার্টকে সুরক্ষিত রাখে।
কী পরিমাণ শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার খাবেন?
প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে শ্বেতসারযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ডায়াবেটিস রোগী কোন শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন?
- লাল চালের ভাত,
- লাল আটার রুটি, চাপাতি, পাস্তা ও নুডল্স,
- বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা থেকে বানানো হোল্গ্রেইন ও মাল্টিগ্রেইন পাউরুটি,
- খোসাসহ সেদ্ধ বা বেক করা মিষ্টি আলু।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডিম ও মাছ-মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস গড়ে তুলতে খাদ্যতালিকা থেকে লাল মাংস (যেমন গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস) ও প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, পেপারনি ও সালামি)-এর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে, কারণ এগুলো খাওয়ার সাথে ক্যান্সার ও হার্টের রোগের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন তৈলাক্ত মাছে প্রচুর ওমেগা-৩ থাকে, যা হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। অন্যান্য প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে শিম, বরবটি ও অন্যান্য বীনজাতীয় খাবার, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম; যারা নিরামিষাশী বা ভেগান খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন তাদের জন্য এগুলো প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।
প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতা
- এগুলো আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে।
- তৈলাক্ত মাছ আপনার হার্টকে সুস্থ রাখে।
কী পরিমাণ প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খাবেন?
প্রতিদিনই এই গ্রুপ থেকে কিছু কিছু খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে সপ্তাহে এক বা দুই পরিবেশন তৈলাক্ত মাছ খান, তবে প্রতিদিন মাংস খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ডায়াবেটিস রোগী কোন দ্ধ খাবার খেতে পারেন?
- নাস্তায় ছোট এক মুঠ বাদাম খাওয়া যেতে পারে, প্রয়োজনে সালাদের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
- মাংসের পরিবর্তে রান্নায় ডাল বা শিমের বীচি ব্যবহার করতে পারেন।
- ডিম সেদ্ধ, পোচ বা ভাজি – যেভাবে আপনার পছন্দ সেভাবেই খেতে পারেন।
- কম তেল-মশলায় রান্না, গ্রিল ও বেক করা মাছ-মাংস খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, পনির ও দই-এ প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে, যা আপনার হাড়, দাঁত ও পেশীর গঠনের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু কিছু দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে চর্বি, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই কম চর্বিযুক্ত বিকল্পগুলো বেছে নেওয়া জরুরি। তবে সেক্ষেত্রে এসব বিকল্প যেন অতিরিক্ত চিনিমুক্ত হয় সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের উপকারিতা
- হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য উপকারী।
- আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে।
কী পরিমাণ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাবেন?
আমাদের প্রতিদিনই গড়ে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস রোগী কোন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন?
- এক গ্লাস দুধ সরাসরি খেতে পারেন, বা গন্ধ ভালো না লাগলে এতে অল্প পরিমাণে দারুচিনি দিয়ে নিতে পারেন। ওটস বা নাস্তায় সিরিয়ালের (cereal) সাথে মিশিয়েও দুধ খেতে পারেন।
- ফল বা তরকারির সাথে টক দই মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- গাজর ও শসার সাথে পনির খেতে পারেন নাস্তা হিসেবে।
- সন্ধ্যার নাস্তার সাথে লাচ্ছি, মাঠা বা সাধারণ দই খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের তেল
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কিছু চর্বিজাতীয় খাবার থাকা প্রয়োজন, কিন্তু স্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রয়োজন খুব কম। স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, যা পরবর্তীতে হার্টের বিভিন্ন রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। মাখন, নারিকেল তেল ও পাম অয়েল এ ধরনের অধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট-যুক্ত তেল। এগুলোর স্বাস্থ্যকর বিকল্প হল কম পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এমন তেল, যেমন অলিভ অয়েল বা অন্যান্য ভেজিটেবল অয়েল ও বাদাম থেকে তৈরি বাটার (পিনাট বাটার, আমন্ড বাটার ইত্যাদি)।
উপকারিতা
- অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আপনার হার্টকে সুস্থ রাখে।
ডায়াবেটিস রোগী কোন তেল খেতে পারেন?
- সালাদে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল দিয়ে খেতে পারেন।
- টোস্টের সাথে সাধারণ মাখনের পরিবর্তে পিনাট বাটার খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা | যে খাবার এড়িয়ে চলবেন

অতিরিক্ত চর্বি, লবণ ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার – এসব যত কম খাওয়া যায়, ততই ভালো। কিন্তু আমরা জানি সব সময় এসব খাবার এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, তাই আপনার শরীরের ওপর এগুলো কী ধরনের প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।
এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে বিস্কুট, চিপ্স, চকলেট, কেক, আইসক্রিম, মাখন ও অতিরিক্ত চিনি দেওয়া কোমল পানীয়। এসব খাবার ও পানীয়তে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে, এবং এরা রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই চিনিমুক্ত, কম ক্যালরির বিকল্প খুঁজে নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো, উপাদেয় পানীয় হল পানি – এতে কোন ক্যালরি নেই।
আরো পড়ুন: শিশু ক্যান্সার ভাল হয়; প্রয়োজন সচেতনতা
এগুলোতে অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাটও প্রচুর পরিমাণে থাকে, তাই এগুলো রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং আপনার হার্টের স্বাস্থ্য – কোনটির জন্যই মোটেও ভালো নয়। এছাড়া এসব খাবারে, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর লবণও থাকে। অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। দিনে মোট ১ চা চামচ (৬ গ্রাম) এর বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
আমরা কখনোই বিশেষ “ডায়াবেটিক” আইক্রিম বা মিষ্টি খাওয়ার পরামর্শ দেই না। কোন খাবারকে “ডায়াবেটিক” খাবার বলা আসলে নীতিবিরুদ্ধ কারণ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ছাড়া এই ধরনের কোন খাবারে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
এসব খাবার খাওয়া কমানোর উপায়
- সম্পূর্ণভাবে বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনি কী পরিমাণে লবণ খাচ্ছেন তা সঠিকভাবে খেয়াল রাখতে পারবেন।
- চিনি ছাড়া চা-কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলো ফলের জুস বা স্মুদির থেকে ভালো, কারণ তাতে অতিরিক্ত শর্করা বা ক্যালরি থাকে না।
- খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করে দিন – এর পরিবর্তে গোল মরিচের গুঁড়া এবং অন্যান্য মশলা ও হার্ব ব্যবহার করে স্বাদে নতুনত্ব আনা যেতে পারে।
- দোকানের সস ও মশলা মিক্স না কিনে বাড়িতেই বিভিন্ন সস ও ম্যারিনেট করার মশলা তৈরী করে খান।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ডা জাহাঙ্গীর কবির
যারা শরীরের মেদ ও চর্বি কমিয়ে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের ডায়েটিং, ব্যায়ামসহ নানা প্রচেষ্টার অন্ত নেই৷ কিন্তু সফলতার হার খুবই কম। এর সমাধানে বর্তমান সময়ে একটি ডায়েটিং পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ডা জাহাঙ্গীর কবির এর ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ‘কিটো ডায়েট’ মূলত সফলতার হার থেকেই এ জনপ্রিয়তা অর্জিত হয়েছে।
কিটোজেনিক ডায়েট হল সুপার লো-কার্ব ডায়েট। এই ডায়েটে কার্ব এক্সট্রিম (extreme) লেভেলে কম থাকবে আর ফ্যাট অনেক হাই থাকবে আর প্রোটিন মিড লেভেলে (mid level) থাকবে। আমাদের নরমাল ডায়েটে ৫০% কার্বোহাইড্রেট থাকে, ২০% প্রোটিন আর ৩০% ফ্যাট থাকে। টিপিক্যাল কিটোজেনিক ডায়েটে টোটাল ক্যালোরিক নিডের কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫% আর ফ্যাট থাকে ৭০%। মানে আপনি সারাদিন যতটা খাবার খাবেন তার মধ্যে খাবারের পার্সেন্টেজ এমন হবে। এ জন্য আপনাকে জানতে হবে কোন কোন খাবারে কী পরিমাণ কার্ব, প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদি থাকে।
# আপাতত মোটেও খাওয়া যাবে না:
১) চালের তৈরি সব কিছু ( ভাত, চাউলের রুটি, চাল দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি)।
২) গমের তৈরি সব কিছু (রুটি, পাওরুটি, বিস্কুট যে কোন প্রকার, গম দিয়ে বানানো অন্যান্য দ্রবাদি)
৩) কোন প্রকার ডাল খাওয়া যাবে না
৪) আলু, মিষ্টি আলু, গাছ আলু বা আলু সাদৃশ্য অন্যান্য আলু, যা শর্করা জাতীয় সবজি যেমন: মূলা।
৫) এছাড়া চিনি এবং চিনি দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা খাওয়া যাবে না।
৬) দই, টক দই, দুধ এবং সরাসরি দুধ দিয়ে বানানো দ্রবাদি।
৭) মধু এবং মিষ্টি ফলমূল খাওয়া যাবে না। কেন খাওয়া যাবেনা সেটা পরে ব্যাখ্যা করছি।
৮) সয়াবিন তৈল, সূর্য মুখী তেল, রাইস ব্যান ওয়েল, ক্যানোলা ওয়েল, এবং সাধারণ কোন তেলে রান্না করা কিছু খাওয়া যাবে না।
৯) ফার্মের মুরগি, যে মুরগিগুলো টেনারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ানো হয়, সয়া খাওয়ানো হয়।
১০) গরুর মাংস, যে গরু বা ষাঁড় গুলো ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মোটা তাজা করা হয়। খাসির ব্যাপারেও একই কথা।
# যা খেতে বাঁধা নেই:
১) সবুজ শাক, সবজি৷ (গাজর, কচি সবুজ মিষ্টি কুমড়া খেলে অল্প পরিমাণ)
২) টক জাতীয় ফল। যেমন, জলপাই, আমলকী, একটি কচি ডাবের পানি।
৩) মাছ, যে কোন প্রকার খেতে পারবেন৷ তবে তৈলাক্ত দেশিয় মাছের ভেতর পাংকাশ, বোয়াল, ইলিশ সরপুঁটি, ব্রীগেড, গ্রাসকার্প, বাইম মাছ উত্তম৷ তৈলাক্ত বা সাগরের মাছ হলে আরো ভালো।
৪) গরু এবং খাসির মাংস খাওয়া যাবে তবে তা হতে হবে ইঞ্জেকশান মুক্ত এবং ঘাস, লতা পাতা বা খড় কুটো খেয়ে লালিত পালিত৷ তবে বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না।
৫) গরু, বা খাসির পায়া খাওয়া যাবে। যেটা খাওয়া এই সময়ে খুবই উপকারী৷ এটাও অল্প পরিমানে খেতে হবে।
৬) মুরগির ডিম খেতে পারবেন৷ ফার্ম হলে সমস্যা নেই, তবে ওমেগা ৩ বা দেশি মুরগি বা হাস হলে বেশী ভালো।
৭) মাছের ডিমও খেতে চেষ্টা করবেন যথা সম্ভব।
৮) ঘি, অর্গানিক বাটার, এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভয়েল, MCT ওয়েল, অর্গানিক Extra virgin cold pressed কোকোনাট ওয়েল৷ এগুলো সব ভাল শপে পাওয়া যায়, তবে নিজে তৈরী করাটাই শ্রেয়।
৯) যে কোন প্রকার বাদাম। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, অন্যান্য বাদাম যা আছে৷ চাইলে বাদাম ব্লেন্ড করে সাথে উপরে উল্লেখিত নারকেল তেল দিয়ে বানাতে পারেন পিনাট বাটার৷ যেটা খেতে তুলনাহীন৷ তবে খাবেন অল্প পরিমাণে।
১০) রং চা বা কফি খেতে পারেন দুধ চিনি ছাড়া। গ্রীণ টি এর সাথে লেবু, আদা, সামান্য লবন মেশাতে পারেন। কফির সাথে, MCT ওয়েল, মাখন বা ঘি, এবং অর্গানিক কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে বাটার কফি বানিয়ে খেতে পারেন৷ এতে ভালো কাজ হবে।
# কীভাবে ডায়েট শুরু করবেন–
ডায়াবেটিস রোগীর সকালের খাবার
১) যাদের সকালে খাওয়ার অভ্যাস তারা আটটা বা সাড়ে আটটার দিকে দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ চা খেতে পারেন। চায়ের মধ্যে যা দেবেন, আদা, লেবু, সামান্য লবণ।
২) অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বা কোকনাট ভিনেগার খেতে পারেন কুসুম গরম পানির সাথে।
৩) এবং কুসুম গরম পানির সাথে লেবু চিপে খেতে পারেন।
সকাল আটটায় নাস্তা খেলে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেতে হবে। এছাড়া যাদের দেরিতে নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস তারা এগারোটার দিকে উপরোক্ত পদ্ধতিতে নাস্তা করবেন এবং দুপুরের খাবার আড়াইটা তিনটায় খাবেন।
ডায়াবেটিস রোগীর দুপুরের খাবার
১) দুপুরের খাওয়ার আগে অবশ্যই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। এতে আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে না এবং চর্বি কাটতে সাহায্য করবে।
২) দুপুরের খাবারের ম্যানুতে শাক, সবজি, মাছ অথবা মাংস , ঘি এ ভাজা ডিম, ঘি’য়ে ভাজা বাদাম সাথে বাটার রাখতে পারেন এবং অবশ্যই টমেটো, গাজরসহ শসা বা শসার সালাদ রাখবেন।
৩) শাক, সবজি অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভয়েল দিয়ে রান্না করবেন। মাছ ভাজলে (ডীপ ফ্রাই থেকে বিরত থাকবেন এতে খাদ্যগুন নস্ট হয়) বা রান্না করলে এই তেল দিয়েই করবেন। সবজি যতটুকু সম্ভব কম সেদ্ধ করবেন। যেন সবজির গুণগত মান ঠিক থাকে।
৪) ডিম কুসুম সহ ঘি বা মাখন দিয়ে ভেজে খাবেন। এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়টা ডিম কুসুম সহ খেতে পারবেন কোন সমস্যা নেই। কারণ ডিম প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাটের উৎস তবে একবার ফ্যাট এ্যাডাপটেশন হয়ে গেলে চাইলেও এত খেতে পারবেন না।
৫) দেশি মুরগি খেতে পারেন, এক দুই টুকরো অথবা উল্লিখিত গরুর মাংস । মাছ খেলে মাংস খাবেন না। মাংস খেলে মাছ খাবেন না। তবে প্রবাসে অবস্থানকরীগণ ফার্মের মুরগি এক টুকরো করে খেতে পারেন৷ কারণ সেখানে ফার্মের মুরগিকে আদর্শ খাবার খাওয়ানো হয় (যদিও মুরগী ব্যায়াম করে না যেটা দেশী মুরগী করে )।
৬) দুম্বা, উট, ভেড়ার মাংস খেলে এক টুকরোর বেশি নয়।
ডায়াবেটিস রোগীর বিকেলের নাস্তা
বিকেলে ক্ষুধা লাগলে উপরে উল্লেখিত চা, বাটার কফি এবং বাদাম খাবেন যে কোন প্রকার মাখন বা ঘি দিয়ে ভাজা বা মেশানো।
ডায়াবেটিস রোগীর রাতের খাবার
১) রাতের খাবারের পূর্বেও ভিনিগার মিশ্রিত এক গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন।
২) রাতের খাবার দুপুরের অনুরূপ খাবেন। আইটেম দুই একটা কম বেশি হোক কোন সমস্যা নেই।
৩) রাত আটটার আগেই সমস্ত খাবার শেষ করুন। এরপর আর পানি ছাড়া কিছুই খাবেন না।
# যে বিষয় গুলো মানতেই হবে:
১) রাত দশটা বা সর্বোচ্চ এগারোটার ভেতর আপনাকে ঘুমিয়ে যেতে হবে৷ কারণ রাত দশটা থেকে দুইটার ভেতর আমাদের শরীরে গ্রোথ হরমোন নি:সরন হয়৷ এবং এই গ্রোথ হরমোনগুলো ফ্যাট বার্নিং এ প্রচুর সহায়তা করে। আপনি যদি এই প্রাকৃতিক বিষয়টি অগ্রাহ্য করেন তবে আপনার ডায়েট অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এবং ভাল ফল পেতে ব্যর্থ হবেন।
২) খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন৷ নামাজ পড়ে (মুসলমানেরা) হাঁটতে বের হবেন।খালিপেটে হাটা ফ্যাট বার্ণিং এর জন্য অত্যান্ত কার্যকরী । হাঁটার গতি নির্ভর করবে আপনার বয়স অনুসারে। বয়স যদি চল্লিশের উর্ধ্বে হয় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটুন ৪০/৬০ মিনিট। বয়স যদি চল্লিশের নিচে হয় তবে জগিং করুন নয়তো জোরে জোরে হাঁটুন ৪০/৬০ মিনিট। তবে খেয়াল রাখবেন হাঁটতে হাঁটতে যেন হাঁপিয়ে না যান বা শ্বাস কষ্ট না হয়। যতটুকু হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন শরীরের সাথে মানিয়ে করুন।
৩) দ্রুত মেদ ভুরি কমানোর জন্য ইয়োগা করতে পারেন৷ ইয়োগা করার পদ্ধতি YouTube এ দেখে নিন।
৪) উপরে লিখিত পদ্ধতিতে সাত থেকে আট দিন নিয়ম করে চলুন। এই সময়টায় আপনার শরীর ফ্যাট বার্নিং বা চর্বি গলাতে শিখে যাবে৷ এটা হচ্ছে আপনার ডায়েটিং এর প্রথম ধাপ।
৫) এবার দ্বিতীয় ধাপে শুরু করুন রোজা রাখা৷ সেহরীতে শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখা আরম্ভ করুন৷ স্বাভাবিক রোজার মতো দিনে পানি এবং সমস্ত কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৬) ইফতার করবেন বাদাম, মাখন এবং শসা দিয়ে৷ সাথে অন্যান্য সালাদ কিংবা টক ফল রাখতে পারেন।
৭) ভিনেগার মিশ্রিত পানি খেয়ে রাতের খাবার উপরে উল্লিখিত অনুরূপ খাবেন এবং অবশ্যই আটটার আগে সমস্ত খাবার শেষ করুন। বেশী ভালো ফল পেতে ইফতারের এক ঘন্টার ভেতর খাবার শেষ করুন এরপর পানি খেতে থাকুন।
৮) রোজা রাখা শুরু করলে বসা থেকে দাঁড়াতে মাথা সামান্য ঘুরতে পারে৷ সেক্ষেত্রে সামান্য লবন মিশ্রিত পানি খাবেন প্রতিদিন৷ এছাড়া ডাবের পানি খেতে পারেন৷ প্রতিদিন একটি কচি ডাব খাওয়া খুবই জরুরি।
৯) একটানা যতগুলো ফাস্টিং (রোজা) করতে পারবেন আপনি তত দ্রুত ফল পেতে থাকবেন। তবে ৭ দিন পর দুইদিন রোজা বিরতি দিবেন৷ ঐ দুইদিনও দুইবেলা খাবেন চার ঘন্টার ব্যাবধানে৷ খাদ্য মেনু আগেরগুলাই৷ বাকী সময় ওয়াটার ফাস্টিং করবেন৷ অর্থাৎ ভিনেগার, লেবু, গ্রীন টি, লবন মিশ্রিত পানি এগুলো খাবেন।
১০) যদি এক টানা রোজা রাখতে না পারেন তবে সপ্তাহে অন্তত দুইটা করে রোজা রাখুন৷ আর যাদের পুরো দিনে রোজা রাখতে সমস্যা আছে তারা উপরের ম্যানুগুলো অনুসরণ করে খাদ্যবিরতির সময়টা দীর্ঘ করবেন৷ অর্থাৎ আংশিক ফাস্টিং করে যাবেন৷ দুইবেলা খাবেন চার ঘন্টার ব্যাবধানে৷ খাদ্য মেনু আগেরগুলাই৷ বাকী বিশ ঘন্টা ওয়াটার ফাস্টিং করবেন৷ অর্থাৎ ভিনেগার, লেবু, গ্রিন টি, লবন মিশ্রিত পানি এগুলো খাবেন৷ সে সাথে নিয়মিত হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন। আশা করা যায় দেড়, দুই মাসের ভেতরেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন।
# আরো কিছু বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়:
১) যতটুকু সম্ভব টেনশন ফ্রী থাকার চেষ্টা করবেন।
২) হাসি খুশি থাকবেন।
৩) প্রতিদিন হাঁটার সময় বা হাঁটার পরে সকালের স্নিগ্ধ রোদ গায়ে লাগানোর চেষ্টা করবেন৷ কারণ রোদে থাকা ভিটামিন ডি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
৪) রাত আটটার ভেতর সমস্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন এতে করে আপনার ঘুমের কোয়ালিটি ভালো হবে।
৫) মুসলমান হলে নিয়মিত নামাজ পড়বেন। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বেন। এতে আপনার ফরজ আদায় হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক কিছু ব্যায়াম হবে৷ যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্য ধর্মের হলে নিজ নিজ ধর্মের রীতি অনুসারে ইবাদত করুন। আর সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখুন এবং ভরসা রাখুন। অবশ্যই আপনি সফলকাম হবেন।
৬) বাহিরের সকল খাবার পরিহার করুন।
৭) তরকারির জন্য প্যাকেটজাত মসলা না কিনে নিজেরা গোটা মসলা মেশিনে ভাঙ্গিয়ে নিন৷ সকল প্রকার প্যাকেটজাত দ্রব্য পরিহার করার চেষ্টা করুন।
৮) রান্নায় সয়াবিন তেলের পরিবর্তে এক্সটা ভার্জিন অলিভওয়েল ব্যবহার করতে না পারলে আপাতত মন্দের ভালো হিসেবে শরিষার তৈল ব্যবহার করুন৷ সেটাও প্যাকেটজাত না কিনে পারলে নিজেরা মেশিনে প্রক্রিয়া করে তৈরি করে নিন।
[নতুন যারা ডায়েট শুরু করতে চাচ্ছেন এ চার্টটি তাদের জন্য। এ লেখাটির যাবতীয় তথ্য ডা. জাহাঙ্গীর কবির এর ফেসবুক পেজ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।]
এর এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন