ইফতেখার ইসলাম: বিগত কয়েক দফা দেশে জাতীয় নির্বাচনে তেমন কোন উৎসাহ-উদ্দীপনা না থাকলেও এবার পরিস্থিতি পাল্টেছে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও এবার ভোটের মাঠ জমজমাট। আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী জমিয়ে তুলেছে নির্বাচন। সাধারণ জনগণও এবার সুযোগ পাচ্ছে নিজের পছন্দ বাছাই করতে। সব মিলিয়ে আগের থেকে খানিকটা বেশিই উৎসব দেখা যাচ্ছে এবারের নির্বাচনে।
রোববার (৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনগণের বাড়তি আমেজ। এছাড়া অনেক বিএনপিপন্থী ভোটারও কেন্দ্রে এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের টানে।

চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনের আবুতোরাব এলাকায় একটি কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন ইকবাল হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে তার পছন্দের রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবে দলটি নির্বাচনে না আসায় এবং আন্দোলন-সংগ্রামে সফলতার মুখ না দেখায় হতাশ তিনি। আগের কয়েক দফা ভোট দিতে না আসলেও এবার আর ঘরে বসে থাকেননি। দলীয় প্রার্থীদের সাথে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী জমিয়েছে ভোটের লড়াই। আর সেসব প্রার্থীর মধ্যে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে এসেছেন ইকবাল। যদিও বিএনপি নির্বাচনে আসলে তাদের পক্ষে থাকার কথাই জানান তিনি।
মঞ্জুরী হক—বয়স ৬০ পেরিয়েছে। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। অভাবের সংসারে বর্তমান সরকারের দেওয়া ভাতার অর্থ বড় সহায়। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ঘরে বসে থাকেননি। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ছুটে আসেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়িস্থ ভুজপুরের একটি কেন্দ্রে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে আমাদের মতো গরিব দুঃখীদের অনেক কষ্ট লাগব হয়েছে। আমি নৌকায় ভোট দিয়েছি।
এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ ছলিমপুর এলাকায় দেখা যায় এক ভোটারকে। যার দুই পায়ে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ছুটে এসেছেন ভোট দিতে। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি। সরাজীবন নৌকায় ভোট দিয়েছি, এবারও নৌকায় দিবো।
ইকবাল-মঞ্জুরীদের মতো হাজার হাজার মানুষ ছুটছেন ভোটকেন্দ্রে। বিগত কয়েক দফা নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা বা তুলনামূলক কম অথবা নামকাওয়াস্তে প্রতিদ্বন্দ্বি হওয়ায় নির্বাচনে তেমন আগ্রহ ছিলো না ভোটারদের। তবে এবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে প্রার্থীর সাথে দলীয় একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় বেড়েছে ভোটের আমেজ।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ ভোটারই ভোট দিচ্ছেন নৌকা বা ঈগল প্রতীকে। যদিও কিছু কিছু আসনে এর ব্যতিক্রম ঘটছে। ভোটাররা বলছেন, এবার অনেকজন প্রার্থী হওয়ায় যাচাই-বাছাই করে ভোট দেওয়া সুযোগ হচ্ছে। অনেকে বিএনপির নির্বাচনে না আসায় হতাশা প্রকাশ করলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে বেশ জমে উঠেছে নৌকা-ঈগলের লড়াই। একদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহাবুব উর রহমান রুহেল অন্যদিকে দীর্ঘদিন তৃণমূলের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে থাকা ঈগল প্রতীকের মো. গিয়াস উদ্দীন বাড়িয়েছেন এই আসনের নির্বাচনী আমেজ। ভোটের আগে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছিলো ভোটের দিনও দেখা যাচ্ছে জমজমাট পরিস্থিতি। তবে সকাল থেকে আশানুরূপ ভোটার পরিলক্ষিত হয়নি এই আসনে। এছাড়া সকাল থেকে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, আটকে রাখাসহ বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে।
এদিকে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেবও জমিয়ে তুলেছেন নির্বাচন। প্রচার-প্রচারণার সময় যেমন এই তুই প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিলো বাড়তি উত্তেজনা নির্বাচনের দিন ভোটারদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে তেমনটা। তবে শেষ হাসি কে হাসে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে পুরো দিন।
তবে চিত্রটা একেবারেই অন্যরকম চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনে। এই আসনের অধিকাংশ ভোটারের আস্থা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম আল মামুনের ওপর। অন্য প্রার্থীরা তেমন শক্তিশালী না হওয়ায় এখানে সংঘাতের সম্ভাবনাও কম রয়েছে। তবে দলীয় নেতাকর্মীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করছেন। আর সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের সরব উপস্থিতি নির্বাচনের আমেজ বাড়িয়েছে।
এখনও পর্যন্ত নির্বাচনের পরিস্থিতি সুষ্ঠু রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ১০টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে গেছে। সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের কর্মকাণ্ডে প্রার্থীরা আশা করি সন্তুষ্ট। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি রয়েছে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন