যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ৩০ দিনের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কর্তৃত্ববাদের উত্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই ট্রাম্প একদিনের জন্য হলেও ‘ডিক্টেটর’ হতে চান বলে মন্তব্য করেছিলেন। এক মাস পার না হতেই দেখা যাচ্ছে, তিনি একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করছে এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
প্রশাসনিক পরিবর্তন ও ছাঁটাই
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম পদক্ষেপ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনাকারী ফেডারেল তদন্তকারী ও আইনজীবীদের পদচ্যুত করা। শুধু তাই নয়, তাঁর প্রতি অনুগত নন এমন সেনা কমান্ডারদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপকভাবে ছাঁটাই করে তিনি প্রশাসনের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বলে সমালোচকরা মনে করছেন।
দ্য আটলান্টিক পত্রিকার বিশ্লেষক টম নিকলস বলেন, “ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলো প্রশাসনের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিচ্ছে। হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই হওয়ায় সরকারি সেবা ব্যাহত হতে পারে।”
নির্বাহী ক্ষমতার সম্প্রসারণ
ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি বিতর্কিত দিক হলো নির্বাহী ক্ষমতার সীমাহীন ব্যবহারের দাবি। তিনি মার্কিন সংবিধানের ২ নম্বর ধারার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমে কংগ্রেস বা বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। এই যুক্তির ভিত্তিতে তিনি ফেডারেল বাজেট কাটছাঁট করেছেন এবং সরকারি নানা প্রকল্পের বরাদ্দ বাতিল করেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, প্রেসিডেন্টের এমন কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করার ইঙ্গিত দিয়েও ট্রাম্প বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও জনপ্রিয়তার পতন
নির্বাচনের আগে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর নীতির ফলে দ্রব্যমূল্য হ্রাস পাবে ও অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি উল্টো। নতুন আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে বাজারে পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন নীতির ফলে সরকারি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুসারে, ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ৫১ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৪১ শতাংশে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় তাঁর প্রতি আস্থা হারিয়েছেন অনেক ভোটার।
ভবিষ্যৎ কি সংকটময়?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধারা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই বছর পরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এর প্রকৃত প্রতিফলন দেখা যাবে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন