মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

কাঠমান্ডুসহ ৩ জেলায় কারফিউ জারি

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

নেপালের কাঠমান্ডু, ললিতপুর এবং ভক্তপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের কারণে তরুণ প্রজন্মের সহিংস সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কারফিউ জারি করা হয়। যদিও বিক্ষোভের মুখে সোমবার রাতেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন অফিস রিং রোডের ভেতরের এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করেছে। এই কারফিউ বল্কুমারী ব্রিজ, কোটেশ্বর, সিনামঙ্গল, গাউশালা, চাবাহিল, নারায়ণ গোপাল চৌক, গঙাবু, বলাজু, স্বয়ম্ভূ, কালাঙ্কি, বলখু এবং বাগমতী ব্রিজসহ পুরো রিং রোড এলাকার ভেতরে কার্যকর থাকবে।

ললিতপুর জেলা প্রশাসন অফিস মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে। জেলা প্রশাসক সুমন ঘিমিরে জানান, এই নির্দেশ ললিতপুর মহানগরীর ২, ৪, ৯, ১৮ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশে যেমন ভৈসেপাটি, সানেপা এবং চ্যাসাল এলাকায় প্রযোজ্য হবে।

ভক্তপুর জেলা প্রশাসন অফিসও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করেছে। জেলা প্রশাসক নামরাজ ঘিমিরে জানান, এই নিষেধাজ্ঞা মাধ্যপুর ঠিমি, সূর্যবিনায়ক, চাঙ্গুনারায়ণ ও ভক্তপুর পৌরসভার এলাকায় কার্যকর থাকবে।

আদেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে সব ধরনের চলাচল, জমায়েত, মিছিল, সভা ও অবস্থান কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন আইন, ১৯৭১-এর ধারা ৬(৩) অনুযায়ী এই কারফিউ জারি করা হয়েছে।

এর আগে নেপালের যোগাযোগ, তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং সোমবার রাতে জানান, ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে গৃহীত হয়েছে এ সিদ্ধান্ত।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন পৃথ্বী সুব্বা গুরুং বলেন, ‘সরকার জেন জি’দের দাবি মেনে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ— আপনারা শান্ত হোন এবং বাড়ি ফিরে যান।’

তিনি আরও জানান, সোমবারের সহিংসতা তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্ট দেশটিতে সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমগুলোকে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। হাইকোর্টের সেই নির্দেশের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমগুলোকে নিবন্ধনের জন্য গত ২৮ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।

কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও সরকারিভাবে নিবন্ধন না করায় ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে এ নিষেধাজ্ঞা।

এদিকে, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ করে দেশটির স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থী এবং তরুণ প্রজন্মকে। জেন জি নামে পরিচিত এই তরুণ প্রজন্ম গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকেই সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

অবশেষে গতকাল রোববার থেকে শুরু হয় আন্দোলন এবং আজ সোমবার তা রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে। রাজধানী কাঠমান্ডুতে কারফিউ অমান্য করে বিক্ষোভে নেমেছেন শিক্ষার্থী-জনতা। শুরুর দিকে এই বিক্ষোভে শীর্ষ দাবি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি এলেও গতকাল এটি প্রায় পুরোপুরি সরকারবিরোধী আন্দোলনে মোড় নেয়। কাঠমান্ডুর বাণেশ্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে গতকাল পদত্যাগ করেছেন নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। এমনকি প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলিরও পদত্যাগের দাবি উঠে।

সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী অলি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স জানিয়েছে যে তারা কখনও নেপালে সরকারিভাবে নিবন্ধন করবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত প্রায় দেড় বছর ধরে এই ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমরা শুধু তাদের নেপালের আইন মেনে চলতে বলেছিলাম; কারণ এটি সঙ্গে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বের সম্মানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।’

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন