কিডনি বা পিত্তথলিতে পাথর হওয়া এখন অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কিডনি পাথর আগে মাঝেমধ্যে শোনা গেলেও, এখন এই সমস্যা অনেক বেশি লোকের হয়। চিকিৎসকদের মতে, এই সমস্যার মূল কারণ হলো অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও পানি কম খাওয়ার অভ্যাস। চিকিৎসকদের মতে, কিডনি পাথর এটি এমন একটি রোগ যা চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনধারায় পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কেন হয় কিডনিতে পাথর?

কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় পদার্থ ছেঁকে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়। তবে কখনো কখনো মূত্রে উপস্থিত ক্যালশিয়াম অক্সালেট, ক্যালশিয়াম ফসফেট বা ইউরিক অ্যাসিড অতিরিক্ত পরিমাণে জমে কিডনিতে পাথর তৈরি করে। পানির ঘাটতি, অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন গ্রহণ, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বা জেনেটিক কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।
পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার কারণ
পিত্তথলির পাথর মূলত কোলেস্টেরল ও বিলিরুবিন জমে তৈরি হয়। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা, ওজনের দ্রুত ওঠানামা, ডায়াবেটিস বা লিভারের সমস্যার কারণে পিত্তথলিতে পাথরের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ বা হরমোনজনিত পরিবর্তনও একটি কারণ হতে পারে।
পাথর হলে কী ধরনের সমস্যা হয়?
পাথর হলে হঠাৎ তীব্র ব্যথা, বমি, প্রস্রাবে রক্ত আসা, বুকে বা পেটে অস্বস্তি, ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিডনিতে পাথর হলে ব্যথা সাধারণত কোমরের পাশ থেকে পেটের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পিত্তথলির পাথরের ক্ষেত্রে পেটের ডান পাশে ও পিঠে ব্যথা বেশি হয়। একবার পাথর হলে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই সতর্কতা অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি।
কিভাবে প্রতিরোধ করবেন কিডনি ও পিত্তথলির পাথর?

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো বেশি পানি পান করা। প্রতিদিন অন্তত ৩–৪ লিটার পানি খেলে মূত্রের মাধ্যমে টক্সিন ও অপ্রয়োজনীয় খনিজ বের হয়ে যায়। গরমের সময় বা শারীরিক পরিশ্রমের পর আরও বেশি পানি পান করা উচিত।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা খুব দ্রুত ওজন কমলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৩. খাবার বাদ না দেওয়া
সকালের নাশতা না করা বা দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা পিত্তথলিতে কোলেস্টেরল জমে পাথর তৈরি করতে পারে। তাই সময়মতো খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৪. সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি থাকলে অক্সালেটসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালংশাক, বাদাম, চা ইত্যাদি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। বেশি করে টাটকা শাকসবজি ও লেবুজাতীয় ফল খেলে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা হয়। অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি।
৫. কম ফ্যাটযুক্ত খাবার খান
পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধে কম চর্বিযুক্ত, প্রোটিন ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন। মাছ, মুরগি, ডিম, ডাল, শাকসবজি ও পূর্ণ শস্য জাতীয় খাবার ভালো বিকল্প। অন্যদিকে, ময়দা, অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার ও ফাস্ট ফুড যতটা সম্ভব কমাতে হবে।
শেষ কথা

কিডনি বা পিত্তথলির পাথর শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, বরং এটি প্রতিরোধের বিষয়। পর্যাপ্ত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। সময়মতো সচেতন হলে ব্যথা, জটিলতা ও অস্ত্রোপচারের মতো বড় ধরণের চিকিৎসা এড়ানো যায়।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন