ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে আমরা নানা প্রসাধনী, স্কিন কেয়ার বা পার্লার ট্রিটমেন্টে মনোযোগ দিই। কিন্তু ভেতর থেকে শরীর ও ত্বক কীভাবে সুস্থ থাকবে, সে বিষয়ে সচেতনতা কম। প্রতিদিনকার খাদ্যাভ্যাসই ত্বকের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। আমরা প্রায়ই বাইরে থেকে কিনে আনা ফাস্টফুড, আইসক্রিম, সোডা বা রাস্তার ধারের ভাজাপোড়া খাবার খাই না ভেবেই। এগুলো খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনই সহজলভ্য। কিন্তু এসব খাবারের ক্ষতিকর প্রভাব অজান্তেই আমাদের ত্বককে বুড়িয়ে দিচ্ছে এবং প্রাকৃতিক জৌলুস নষ্ট করছে।
ত্বকে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে যেসব খাবার থেকে দূরে থাকা দরকার
অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার ও আইসক্রিম

আইসক্রিম, চকলেট বা কেকের মতো মিষ্টিজাতীয় খাবারে থাকে অতিরিক্ত চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই উপাদান শরীরে গ্লাইকেশন নামক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়, যা কোলাজেনকে দুর্বল করে। কোলাজেন কমে গেলে ত্বক ঝুলে যায়, বলিরেখা দেখা দেয় এবং আর্দ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে আইসক্রিম খাওয়া সমস্যা নয়, তবে প্রতিদিন খেলে তা ত্বকের বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে।
মিষ্টি পানীয় ও সোডা
সব বয়সী মানুষই ঠান্ডা পানীয় বা সোডা খেতে ভালোবাসেন। কিন্তু এগুলোতে থাকা চিনি ও ফসফরিক অ্যাসিড শুধু হাড় ও দাঁত থেকেই ক্যালসিয়াম কমায় না, বরং শরীরে প্রদাহও বাড়ায়। প্রদাহ বেড়ে গেলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যায়, উজ্জ্বলতা হারিয়ে মলিন দেখায়।
বাজারজাত ফলের রস

অনেকে প্যাকেটজাত ফলের রসকে স্বাস্থ্যকর ভেবে খেয়ে থাকেন। কিন্তু এতে প্রাকৃতিক ফাইবার থাকে না, অথচ যোগ করা থাকে প্রচুর চিনি। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং প্রদাহ তৈরি করে। এর প্রভাবে ত্বক স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে ঝুলে পড়ে। তাই ত্বক ভালো রাখতে চাইলে বাজারি জুস বাদ দিয়ে তাজা ফল খাওয়াই সেরা।
মার্জারিন
অনেকে মাখনের বিকল্প হিসেবে মার্জারিন বেছে নেন, কারণ এটি কম ক্যালরিযুক্ত। কিন্তু মার্জারিনে থাকে ট্রান্স ফ্যাট, যা হৃদয়ের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনই ত্বকের জন্যও। এটি রক্তনালী শক্ত করে তোলে, ত্বক শুষ্ক করে এবং অকাল বলিরেখার কারণ হয়। সীমিত পরিমাণে প্রাকৃতিক মাখন খাওয়া বরং তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর হতে পারে।
কৃত্রিম মিষ্টিকারক
অনেকে চিনি এড়াতে কৃত্রিম সুইটনার ব্যবহার করেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এসব মিষ্টিকারক অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও বিপাক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে শরীরে প্রদাহ বাড়ে এবং ত্বকের বার্ধক্য দ্রুত হয়। পরিবর্তে সামান্য মধু ব্যবহার করা তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর।
কেক, মাফিন ও বেকারি খাবার

মাফিন, কেক বা বিস্কুট আমাদের প্রিয় নাস্তার তালিকায় থাকে। কিন্তু এসব খাবারে ব্যবহৃত ময়দা, চিনি ও ভেজিটেবল অয়েল শরীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে অল্প সময়ে এনার্জি ক্র্যাশ হয়, প্রদাহ তৈরি হয় এবং কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বাড়িতে ওটস, বাদাম বা ডার্ক চকলেট দিয়ে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস বানানো ভালো বিকল্প।
অ্যালকোহল
অ্যালকোহল শুধু লিভারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং শরীরকে ডিহাইড্রেটও করে। এতে শরীরে ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি দেখা দেয়, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ফলে ত্বক ক্লান্ত, শুষ্ক ও নিস্তেজ দেখায়। তাই উজ্জ্বল ত্বক ধরে রাখতে চাইলে অ্যালকোহল পরিহার করাই শ্রেয়।
শেষ কথা
ত্বকের সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক যত্নে সীমাবদ্ধ নয়, বরং খাদ্যাভ্যাস ও শরীরের ভেতরের সুস্থতার ওপরই নির্ভরশীল। আইসক্রিম, সোডা, প্যাকেটজাত জুস, মার্জারিন, কেক বা অ্যালকোহলের মতো খাবার যত বেশি খাবেন, ত্বক তত দ্রুত বুড়িয়ে যাবে এবং প্রাকৃতিক আভা হারাবে। তাই সুন্দর ত্বক পেতে হলে এসব ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলা, প্রচুর পানি খাওয়া, তাজা ফল ও শাকসবজি খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হতে পারে সর্বোত্তম সমাধান।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন