প্রতি বছর পহেলা মে বিশ্বজুড়ে মে দিবস পালিত হয় শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে। আমাদের দেশেও বিশেষ আয়োজনে এ দিবস পালিত হয়। এ দিন রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে। রঙ-বেরঙের পোস্টার ছাপানো হয়, পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। আলোচনা সভা, জনসভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের কমতি থাকে না। প্রত্যেকেই শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে। সরকারপ্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, শ্রমিক নেতৃবর্গ সবাই মে দিবস উপলক্ষে বাণী দেয়, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে; কিন্তু বাস্তবতা হলো, মে দিবসের ১৩৭ বছর পূর্ণ হলেও এখনো সর্বত্র শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনো শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হয়। এখনো তাদের মালিকপক্ষের বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অধিকার দাবি করতে গিয়ে এখনো তাদের চাকরি হারাতে, জেলে যেতে এমনকি জীবন হারাতে হয়। সুতরাং কথার ফুলঝুরি নয়, আজ প্রয়োজন শ্রমিকদের অধিকার প্রদানের সত্যিকারের অঙ্গীকার। তাহলেই সার্থক হবে মে দিবস পালন
আন্তর্জাতিক মে দিবসের মূল যে দাবি—৮ ঘণ্টা কাজ করে বাঁচার মতো মজুরি, তা থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের শ্রমিক মেহনতি মানুষ অনেক দূরে। বেশির ভাগ শিল্প-কারখানায় ন্যূনতম বাঁচার মতো মজুরি, ৮ ঘণ্টা শ্রমদিবস, নিয়োগপত্র, সাপ্তাহিক ছুটি, কাজ ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা—এর সব বা অধিকাংশই অনুপস্থিত। শ্রমিক শ্রেণীর বর্তমান গঠনের কারণে সব খাতের শ্রমিকদের মধ্যে অস্থায়ী, দিনভিত্তিক, খণ্ডকালীন, অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকের সংখ্যাই এখন বেশি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। ১৩০ বছর পেরিয়ে যাওয়া অতীতের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা হয়তো আজ আর নেই। সারা বিশ্বে দৈনিক ৮ ঘণ্টার কাজ নির্ধারিত হয়েছে বহু দিন। জীবনযাত্রার ধরন পাল্টে যাওয়ায় একজন আমেরিকান শ্রমিককে স্ট্যাটাস বজায় রাখতে একই দিনে তিনটি কর্মস্থলে কাজ করতে হয়। সেখানে আর ঘণ্টার হিসাব থাকে না। ধর্মঘট আজ মূল্য হারিয়েছে। প্রতিবাদ জানাতে হলে তা কর্মরত অবস্থায় ব্যাচ ধারণ করে জানাতে হয়। ক্ষতিকর কর্মবিরতি কে চায়?
শ্রমিকের শ্রমে উৎপাদিত হয় ব্যবহার উপযোগী দ্রব্যসামগ্রী কিন্তু তা ভোগ করার অধিকার শ্রমিকের কতটুকু? অর্থনীতির প্রতিটি সূচকের উন্নতি ঘটানোর পেছনেই থাকে শ্রমিকের ঘাম। কিন্তু সবচেয়ে কম পুষ্টি, কম শিক্ষা, কম স্বাস্থ্য সুবিধা, কম বিশ্রাম, কম নিরাপত্তা যেন শ্রমিকদের জন্যই বরাদ্দ। অথচ সারা বিশ্বেই খাদ্য উৎপাদনসহ ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ছে। বাংলাদেশেও জিডিপি বৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিমাণ, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ উন্নয়ন যতই বাড়ছে, তার সঙ্গে এ কথাটাও যুক্ত হয়ে থাকছে যে বাংলাদেশ সস্তা শ্রমিকের দেশ। শ্রমিকের মজুরি কম তার কারণ নাকি বাংলাদেশের শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কম! কিন্তু উৎপাদনশীলতা শুধু শ্রমিকের শ্রমশক্তির ওপর নির্ভর করে না। মেশিন, ম্যানেজমেন্ট এবং ম্যানপাওয়ার এই তিনটিই আছে উৎপাদনশীলতার সঙ্গে। সবচেয়ে যা জরুরি তা হলো শ্রমের মর্যাদা নিশ্চিত করা। শ্রমিক শ্রেণী সামাজিকভাবে মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি এখনো।
শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রগুলো নিরাপদ নয়, মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শুধু পেটের দায়ে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী দেশের মোট শ্রমিক সংখ্যা ৫ কোটির কাছাকাছি। বাংলাদেশের এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতি বছরই আমাদের দেশে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হলেও এ দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যারা সবচেয়ে বড় অংশীদার তাদের অধিকারের কথাগুলো সরকার থেকে শুরু করে সবাই ভুলে যায়। ফলে মে দিবস আসে মে দিবস চলে যায় কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয় না। একজন মানুষের জীবন ধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন, অর্থাৎ মনসম্পন্ন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এসবই একজন শ্রমিকের প্রাপ্য।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের গুরুত্ব¡ ও তাৎপর্য অনুধাবন করে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্রশাসন ও মালিক শ্রেণীকে অনেক বেশি আন্তরিক হতে হবে। মে দিবস পৃথিবীতে বঞ্চনা ও শোষণ থেকে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে, তা তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন শ্রমিক শ্রেণী তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে। মালিকদের উপলব্ধি করতে হবে শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের বিকাশ বা মুনাফা অর্জন করা যাবে না। শ্রমিকরা দেশের সম্পদ, তাদের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এ কারণে তাদের অবহেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের কাজের অধিকার সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রগুলো নিরাপদ নয়, মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শুধু পেটের দায়ে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী দেশের মোট শ্রমিক সংখ্যা ৫ কোটির কাছাকাছি। বাংলাদেশের এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতি বছরই আমাদের দেশে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হলেও এ দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যারা সবচেয়ে বড় অংশীদার তাদের অধিকারের কথাগুলো সরকার থেকে শুরু করে সবাই ভুলে যায়। ফলে মে দিবস আসে মে দিবস চলে যায় কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয় না। একজন মানুষের জীবন ধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন, অর্থাৎ মনসম্পন্ন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এসবই একজন শ্রমিকের প্রাপ্য।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের গুরুত্ব¡ ও তাৎপর্য অনুধাবন করে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্রশাসন ও মালিক শ্রেণীকে অনেক বেশি আন্তরিক হতে হবে। মে দিবস পৃথিবীতে বঞ্চনা ও শোষণ থেকে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে, তা তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন শ্রমিক শ্রেণী তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে। মালিকদের উপলব্ধি করতে হবে শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের বিকাশ বা মুনাফা অর্জন করা যাবে না। শ্রমিকরা দেশের সম্পদ, তাদের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এ কারণে তাদের অবহেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের কাজের অধিকার সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন